বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জীবন-জীবিকা নিয়ে স্পষ্ট কিছু পায়নি সিপিডি

  •    
  • ৪ জুন, ২০২১ ১৬:১১

‘সামষ্টিক অর্থনীতির কাঠামোর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। বলা হচ্ছে জীবন ও জীবিকার মাধ্যমে আমরা এগিয়ে যাব। কিন্তু এখানে কী ধরনের সংস্কার দরকার, কী ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা দরকার এবং কীভাবে করব, সেটার কোনো সঠিক ও স্বচ্ছ রূপরেখা বাজেটে নেই।’

প্রস্তাবিত বাজেটকে জীবন-জীবিকার বাজেট বলা হলেও এ ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু নেই বলে মনে করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা বলছে, স্বাস্থ্য, কৃষি ও কর্মসংস্থানে যে পরিমাণ বরাদ্দ দেয়ার কথা বাজেটে তা দেয়া হয়নি। সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোও দুর্বল।

শুক্রবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনায় সংস্থাটি এসব কথা তুলে ধরেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। অন্যদের মধ্যে সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন ।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, করোনার কারণে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অনেক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু সেটা পুষিয়ে নেয়ার জন্য মধ্যমেয়াদী নীতিমালা দরকার। বাজেটে তেমন কিছু করা হয়নি।

তিনি বলেন ‘সামষ্টিক অর্থনীতির কাঠামোর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। বলা হচ্ছে জীবন ও জীবিকার মাধ্যমে আমরা এগিয়ে যাব। কিন্তু এখানে কী ধরনের সংস্কার দরকার, কী ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা দরকার এবং কীভাবে করব, সেটার কোনো সঠিক ও স্বচ্ছ রূপরেখা বাজেটে নেই।’

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘করোনার এই সময়ে কোভিড নিয়ে সরকারের চিন্তার স্বচ্ছতা আছে। কিন্তু বরাদ্দের মিল নেই। সামষ্টিক অর্থনীতির কাঠামোর সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই। জীবন-জীবিকার বাজেট বলা হলেও এ বিষয় নিয়ে স্পষ্ট কিছু নেই। শিরোনাম না থাকলে বোঝার উপায় নেই এটা করোনাকালের বাজেট।’

তার মতে, সাধারণ মানুষের জন্য বাজেটে সরকারের আর একটু সচেতন হওয়ার দরকার ছিল।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করা উচিত ছিল সরকারের। কারণ সাধারণ মানুষের হাতে টাকা দিলে তারা সেটা খরচ করতেন, এতে অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসত। অর্থনীতি পুনুরুদ্ধারেও সেই অর্থ কিছুট কাজে লাগত। সে জন্য এখনও যে সময় আছে তার মধ্যে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর দাবি করছে সিপিডি, যা প্রস্তাবিত বাজেটে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

সামাজিক নিরাপত্তায় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দরকার

কোভিড-১৯ সংকটের মধ্যে নতুন অর্থবছরের বাজেটে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা খরচের যে পরিকল্পনা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাজিয়েছেন, তার মধ্যে ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি বরাদ্দ রেখেছেন সামাজিক নিরাপত্তা খাতে।

এই অঙ্ক মোট বাজেটের প্রায় ১৮ শতাংশ। আর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ১১ শতাংশ।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ আরও বাড়ানো উচিত ছিল। করোনায় নতুন অনেক দারিদ্র্য হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে স্বচ্ছ তালিকা দরকার। শহরে ও গ্রামের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় কারা সুবিধা পাবে সে বিষয়ে আলাদা তালিকা করতে হবে।’

সিপিডি বলছে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন নেই। কারোনার কারণে এডিপিতে সামাজিক খাত উন্নয়নের জন্য অগ্রাধিকার দেয়া হয়নি।

স্বাস্থ্যখাতে সংস্কার জরুরি

সিপিডির বলছে, স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক সংস্কার করতে হবে এই খাতে। অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে। কোভিড-১৯ চলে গেলেও আমাদের স্বাস্থ্যখাত যেন একটি শক্ত ভিত্তির ওপর থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে এখনই।

কিন্তু বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসুচিতে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যখাতের নতুন কোনো প্রকল্পে বরাদ্দ নেই। এমনকি এই করোনাকালেও কোভিড সংক্রান্ত কোনো প্রকল্প হাতে নেয়া হয়নি।

কর্মসংস্থান সৃষ্টি চ্যালেঞ্জ

করোনায় যে হারে বেকারত্ব বেড়েছে তার উত্তরণে বাজেটে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ নেই বলে মন্তব্য করেছে সিডিপি। সংগঠনটি বলছে, কর্মসংস্থান সৃষ্টির সঙ্গে অনেকগুলো মন্ত্রণালয় জড়িত। কিন্তু বাজেট পর‌্যালোচনায় দেখা গেছে, বরাদ্দ কিছু কিছু মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ কমেছে।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘করোনার একদিকে সবাইকে টিকাদান, অন্যদিকে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে আনার জন্য আগামী ৩-৫ বছর ধরে আমরা কী ধরনের কাজ করব, তার একটি মধ্যমেয়াদী পরিষ্কার নীতিমালা থাকা দরকার ছিল। এই যে ৫০তম বাজেটে দেয়া হলো- জীবন ও জীবিকার প্রাধিকার দিয়ে আমরা এগিয়ে যাব, সেটাকে বাস্তবায়নের কোনো সঠিক ও স্বচ্ছ রূপরেখা দেখতে পারছি না।’

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ দেয়া হয়নি। উল্টো যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। বেসরকারি খাতকে প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছে, তারা কি বিনিয়োগে আসবে কিনা সেটা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

শিক্ষা খাত

সিপিডি বলছে, গেল দেড় বছরে জ্ঞানের যে ধস হয়েছে সে প্রেক্ষিতে শিক্ষা খাতে আরও নজর দেয়া উচিত ছিল। শিক্ষায় প্রযুক্তিগত অবকাঠামো, বাড়তি প্রস্তুতি, মান উন্নয়নে বরাদ্দ দরকার। যেখানে বেশি প্রেয়োজন ছিল গুরুত্ব দেয়ার সেখানে গুরুত্ব দেয়া হয়নি।

কর ফাঁকি রোধ

কর ফাঁকি রোধ করলেই কেবল রাজস্ব আদায় সম্ভব। কিন্তু সেই উদ্যোগ নেই বলে মনে করে সিপিডি।

তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘যেভাবে কর ছাড় দেয়া হয়েছে, তাতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হতেও পারে, নাও পারে। যদি করফাঁকি রোধ করা সম্ভব হয়, তাহলে হয়তো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব। এটা আমরা অতীতে কখনও দেখিনি এবং এই ধরনের ফাঁকি রোধের ক্ষেত্রে যে ধরনের বিরাট প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ ও পরিকল্পনা দরকার ছিল, সেটার কোনো ছবি আমরা বাজেটে দেখিনি।’

দেশীয় বাজারকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কর ছাড় দেয়ার উদ্যোগকে ইতিবাচক বলছে সিপিডি।

জিডিপি

২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থমন্ত্রণালয় থেকে ২০২১ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ১ শতাংশ দেখানো হয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি যে ৭ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হয়েছে, সেটি কীভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে তার কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এখনও চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রকাশ করেনি। এ ছাড়া, ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো একটি সংখ্যা দিয়েছিল সেটিও অর্থবছর শেষে প্রকাশ করেছি। এরপর আর কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি।

তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সেটিও বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ তারা যে লক্ষ্যমাত্রাটি দিয়েছিল তার চেয়ে কম। কিন্তু এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল তার চেয়ে কিছুটা বেশি।’

বিনিয়োগ

কয়েক বছর ধরে দেশে বিনিয়োগের স্থবিরতা চলছে বলে মনে করে সিপিডি। তাদের দৃষ্টিতে, প্রস্তাবিত বাজেটে পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট কিছুটা কমানো হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে জিডিপির ৮ দশমিক ১০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে যা আছে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ।

সিডিপি বলছে, ব্যক্তিখাতের খাতের বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও বলা হয়েছে ২০২২ অর্থবছরে জিডিপির ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে এই হার ২৩ থেকে ২৪ শতাংশের বেশি উঠতে পারছে না। এখন করোনাকালীন সময়ে কীভাবে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাড়বে সেটি কিন্ত স্পষ্ট নয়।

রপ্তানি আয়

রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমরা যদি চলতি অর্থবছর বা ২০২০-২১ অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত দেখি তাহলে দেখব এ সময়ে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৮ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১২ শতাংশ। সুতরাং এখানে বুঝাই যাচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রা থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এটি একটি চিন্তার বিষয়।’

রেমিট্যান্স

রেমিট্যান্স প্রবাহের বিষয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ শতাংশ। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, ‘আমরা যেটা দেখছি রেমিট্যান্স বাড়ছে কিন্তু দেশের জনবল দেশের বাইরে যাওয়ার সংখ্যাটি কমছে। ফলে এ অবস্থায় আমরা কতদিন এই রেমিট্যান্স প্রবাহটি ধরে রাখতে পারবো সেটি একটি চিন্তার বিষয়।’

বাজেট ঘাটতি

বাজেট ঘাটতির পূরণের মূল জায়গাটি হচ্ছে ব্যাংকের থেকে ঋণ নেয়া। এ ছাড়া, সঞ্চয় পত্র বিক্রি করেই এই ঘাটতি মেটানো হয়। এছাড়া আছে বৈদেশিক উৎস। এটার জন্য যে মোট বৈদেশিক সাহায্যের প্রয়োজন পড়বে তা হলো ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘এখানে একটি বিষয় হচ্ছে, করোনার এই সময়ে বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ বাড়ছে। আমরা বৈদেশিক সাহায্য আরও বেশি পেতে পারি, যদি আমরা সেটি ব্যবহার করতে পারি। দ্রুত ছাড় করতে পারি।’

এ বিভাগের আরো খবর