বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভাঁওতাবাজির বাজেট: বিএনপি

  •    
  • ৪ জুন, ২০২১ ১৪:৩৬

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গরিব মারার বাজেট বলতে চাই না। এই বাজেট দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এক কথায় এটিই বলব। যাদের খুশি করলে সরকারের দুর্নীতি বহাল থাকবে, তাদের দুর্নীতির জন্য বাজেটে ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারের প্রতিটি বাজেটকে ‘গরিব মারার’ বাজেট উল্লেখ করলেও এবার তা বলছে না বিএনপি। দলটির মহাসচিব জানালেন, সরকার এবার ’ভাঁওতাবাজির’ বাজেট দিয়েছে।

জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটের শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’।

তবে জীবন-জীবিকার কিছু দেখছেন না বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে বাজেট প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিপাদ্য শব্দমালার মাঝেই ভাঁওতাবাজি পরিষ্কার।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের স্বাভাবিক জীবন গত ১৮ মাস যাবৎ অচল। এর মধ্যে অপরিকল্পিত লকডাউনে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন চূড়ান্ত রকম থমকে গেছে। তাই সুস্পষ্টভাবে মানুষের জীবন-জীবিকার কথা মাথায় না রেখে কেবল অর্থনীতির নানা তত্ত্ব ও বিশাল সংখ্যার আর্থিক উপস্থাপনার মাধ্যমে কার্যত জনগণের সঙ্গে একধরনের ভাঁওতাবাজি করা হয়েছে।

‘বাজেটে স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। অথচ এই মুহূর্তে মানুষের স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গরিব মারার বাজেট বলতে চাই না। বাজেট দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এক কথায় এটিই বলব।’

সরকারের সমালোচনায় ফখরুল বলেন, ‘এই সরকারের জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহি নেই। তাই যারা দিন আনে দিন খায়, তাদের সরকারের খুশি করার দরকার নেই। যাদের খুশি করলে সরকারের দুর্নীতি বহাল থাকবে, তাদের দুর্নীতির জন্য ব্যবস্থা করছে।’

লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুলের অভিযোগ, বাজেটের ৩৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশের বেশিই হলো ঘাটতি, যা বৈদেশিক অথবা অভ্যন্তরীণ সোর্স থেকেই ঋণের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। বিএনপি অতীতে দেশকে বৈদেশিক ঋণনির্ভরতা থেকে বের করে আনার চেষ্টা করেছে। আওয়ামী লীগ তাদের মেগা প্রকল্প ও মেগা দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনীতিকে বারবার বৈদেশিকনির্ভর করে তুলছে। দেশের প্রতিটি শিশুর মাথায় জন্মের আগেই হাজার হাজার টাকার ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। এবারের বাজেট তারই চরম বহিঃপ্রকাশ। আয় নেই, ধার করা টাকায় বাজেট করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বাজেটে হতাশ মধ্যবিত্তরা, খুশি ব্যবসায়ীরা। বাজেটে নানাভাবে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য তেমন কোনো ছাড় দেয়া হয়নি। এমনকি ২ কোটি ৪৫ লাখ নতুন গরিবের কিংবা মধ্যবিত্তদের কথা বাজেটে নেই। সাধারণ মানুষের কাছে অর্থ পৌঁছে দেয়ার কোনো বন্দোবস্তের কথা বাজেটে বলা হয়নি।

ফখরুলের মতে, মহামারিকালে মানুষের জীবন-জীবিকার স্বাভাবিক গতি ফিরে পেতে ও বেঁচে থাকার নিশ্চয়তায় চলমান স্বাস্থ্য পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এটি অবাস্তবায়নযোগ্য, কাল্পনিক ও কাগুজে বাজেট ছাড়া আর কিছুই নয়।

করোনা পরিস্থিতি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণকে কোভিডের মহাসংকট থেকে রক্ষার দিকনির্দেশনা নেই। এটি দুর্নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার বাজেট। জনগণের সমর্থনবিহীন সরকারের রাষ্ট্রের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তাই এ বাজেটে জনস্বার্থের কোনো প্রতিফলন ঘটেনি।

‘সার্বিকভাবে বাজেট বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট পথরেখা না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করছি। ঘোষিত বাজেটে অপচয়, অব্যবস্থাপনা বন্ধ করে সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ হয়নি। বরং এই সরকারের সময় দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা ও আইনের শাসন এবং জবাবদিহির যে ঘাটতি রয়েছে, তারই প্রতিফলন ঘটেছে বাজেটে।’

বিএনপির এই নেতার দাবি, মুক্তবাজার অর্থনীতির কথা বলে দেশে আয়বৈষম্য বেড়েছে। ‘স্বজন তোষণের’ ভিত্তিতে এ সরকারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে। যার ফলে মাত্র ১ শতাংশ লোকের কাছে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ সম্পদ পুঞ্জীভূত হচ্ছে। এমনকি এই করোনাকালেও অপ্রদর্শিত আয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন হাজার হাজার লোক। ফলে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সম-প্রতিযোগিতার স্বাভাবিক যে বিকাশ, সে সুযোগ তারা বন্ধ করে দিয়েছে।

ফখরুলের মতে, বাজেটের প্রকৃত আকার বৃদ্ধির পরিবর্তে সংকোচিত হয়েছে। করোনা মহামারির মধ্যে দেয়া এ বাজেটে মধ্যমেয়াদি প্রক্ষেপণ থাকা উচিত ছিল।

তিনি বলেন, কারোনাকালীন এই বাজেটে স্বাস্থ্য এবং হতদরিদ্র ও শ্রমিকদের প্রত্যাশিত প্রণোদনা উপেক্ষিত হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট দেখে মনে হবে, সরকার মনে করে না, আগামী দিনেও জনগণের ভোটের প্রয়োজনীয়তা আছে।

সামাজিক নিরাপত্তা খাত প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘সামাজিক সুরক্ষার নামে মানুষের সঙ্গে ভাঁওতাবাজি করা হচ্ছে। এই খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য যে সহায়তা সরকার দিয়েছে, তা লোক দেখানো। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের মধ্যে সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদ ও প্রাইমারি স্কুলশিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকাও রয়েছে।’

বাজেটে সরকারের স্বাস্থ্য খাত নিয়েও সমালোচনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেছেন, ‘এত কথা বলা হচ্ছে, অথচ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপির সেই ১ শতাংশের মধ্যেই আছে। এই বরাদ্দ দিয়ে স্বাস্থ্য খাতের চাহিদা মিটবে না। অন্যদিকে বরাদ্দ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্য খাত পিছিয়ে আছে।

‘করোনার টিকা প্রদানের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। সরকার ২৫ লাখ মানুষকে মাসে টিকা দেয়ার কথা বলেছে। সেটা কবে থেকে কার্যকর হবে, কীভাবে হবে, সে সম্পর্কে কিছু নিশ্চিত বলা হয়নি।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বড় আকারের বাজেট আর বড় অঙ্কের প্রবৃদ্ধির আলোচনার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি অর্থমন্ত্রী। ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বড় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উচ্চাভিলাষ বজায় রেখেছেন। এবার সবাই আশা করেছিল জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে সাধারণ মানুষের হাতে নগদ অর্থ পৌঁছে দেয়ার দিকে বেশি নজর দেবে সরকার। অথচ সে জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেননি অর্থমন্ত্রী।’

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর আরোপের সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল বলেন, করোনাকালে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছে না। ১০ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বন্ধ আছে। অনেকে বেকার হয়ে গেছেন। কেজি স্কুল, কারিগরিসহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু বাজেটে এসব খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রস্তাব দেখা যায়নি। বরং প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর আরোপের প্রস্তাব করেছে। সরকার মানবসম্পদ উন্নয়নের কথা বললেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানের ওপর ট্যাক্স আরোপ করে মূলত শিক্ষা সংকোচন নীতি গ্রহণ করল।

বাজেটে প্রবাসীদের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর