করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে একটি পর্যটন। অন্যতম সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক খাতটির সংকট উত্তরণে নতুন অর্থবছরের বাজেটে তাই আলাদা বরাদ্দ রাখার দাবি জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রস্তাবিত বাজেটে সেটা না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন সিলেটের পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। যদিও রেস্তোরাঁয় ভ্যাট কমানো ও অবকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ বৃদ্ধিতে সন্তুষ্টি ঝরেছে তাদের কণ্ঠে।
দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে এপ্রিল থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় পর্যটনকেন্দ্র, আবাসিক হোটেল-রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁ। দ্বিতীয় দফায় বন্ধ ঘোষণা করার পর এই খাতসংশ্লিষ্ট সবাই পড়েছেন বিপাকে। ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার কথাও ভাবছেন অনেকে।
এমন অবস্থায় বৃহস্পতিবার ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এরপরই বাজেটের চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু করেন সিলেটের পর্যটনশিল্প-সংশ্লিষ্টরা। জানিয়েছেন তাদের সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির কথা।
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার জলিল বলেন, ‘বাজেটে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের ওপর করের চাপ বাড়বে। করোনার সময়ে কর বাড়লে ব্যবসায়ীরা আরও বিপাকে পড়বেন।
‘পর্যটন সেক্টরেও দেয়া হয়নি বরাদ্দ। আরও এক বছর বন্ধ থাকলে সবাই ব্যবসা গুটিয়ে ফেলবেন। এদের কিছু ভর্তুকি দিয়ে খাতকে চাঙা রাখার প্রয়োজন ছিল।’
সিলেট একটি পর্যটন নগরী। এখানে প্রচুর পর্যটক আসেন। এখানকার পর্যটনকেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন এবং বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে বাজেটে দিকনির্দেশনা থাকা প্রয়োজন ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সিলেট চেম্বারের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব বলেন, ‘নন এসি রেস্টুরেন্টগুলোর ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। এটা একটা ভালো দিক। এতে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ভোক্তারাও লাভবান হবেন।’
‘ভ্যাট দিতে বিলম্ব ফি ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। এতে করোনার সময়ে পর্যটন খাতসংশ্লিষ্টসহ সব ব্যবসায়ী লাভবান হবেন’-যোগ করেন তিনি।
চেম্বার সভাপতি আরও বলেন, ‘যেসব পর্যটক বিদেশ থেকে দেশে আসছেন, কোম্পানি টু কোম্পানি পেমেন্টের ক্ষেত্রে তারা বিল পরিশোধ করলে ১০ শতাংশ কর কেটে নেয়া হচ্ছে। এটা বাতিল করা প্রয়োজন ছিল। এটা বাতিল করা গেলে দেশে পর্যটন বিকাশে বড় ভূমিকা রাখবে। কিন্তু বাজেটে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই।’
প্রস্তাবিত বাজেটে বিপাকে পড়া পর্যটন খাতের জন্য আলাদা বরাদ্দ না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন সিলেট হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমাত নুরী জুয়েল।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন হোটেল ব্যবসার অবস্থা খারাপ। বহু দেশ হোটেল-মোটেলের ওপর ভ্যাটের পরিমাণ কমিয়েছে।
‘আমাদের দেশেও এই সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু ঘোষিত বাজেটে সে রকম কিছু দেখিনি। তবে অবকাঠামো খাতে বড় অঙ্কের বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এতে পর্যটনসংশ্লিষ্টরাও উপকৃত হবেন।’
সিলেট চেম্বার সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব অবশ্য মনে করেন, করোনার সময় হিসেবে বাজেট যথেষ্ট ভালো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বাজেটে ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে শিল্পের কাঁচামাল বা উপকরণ আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম কর ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ নির্ধারণ, কৃষি যন্ত্র আমদানিতে অগ্রিম কর প্রত্যাহার, ভ্যাট অনাদায়ে জরিমানা দ্বিগুণ থেকে কমিয়ে ভ্যাটের সমপরিমাণ করা, পণ্য পরিবেশক ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ন্যূনতম করহার কমানো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তাদের বার্ষিক টার্নওভারে ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত কর অব্যাহতি সুবিধা উল্লেখযোগ্য।
‘এসব সময়োপযোগী সুবিধা দেয়ার ফলে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা উপকার পাবেন।’