জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে তৃণমূল রাজনীতিকরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন। উত্তরাঞ্চলের আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, প্রস্তাবিত বাজেট উন্নয়ন ও গণমানুষের কল্যাণমুখী। অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেটকে লক্ষ্যহীন বলে মন্তব্য করে বিএনপি নেতারা বলছেন, এই বাজেটে গরিব আরও গরিব হবে, ধনী হবেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু বাজেটকে উন্নয়ন ও গণমুখী উল্লেখ করে বলেন, ‘করোনাকালে এ বাজেটে জীবন ও জীবিকা সমন্বয়ের চেষ্টা করা হয়েছে। এতে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে কর্মহীন মানুষকে কাজ দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা চাই বৈষম্যহীন উন্নয়ন। সব অঞ্চলে সমতা হবে।
‘এই অঞ্চলের কৃষির জন্য আলাদা ভর্তুকির ব্যবস্থা এবং কৃষিনির্ভর কলকারখানা স্থাপনে সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে বেকারদের জন্য আলাদা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত।’
রংপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রইচ আহমেদ বলেন, ‘এই বাজেট গরিব মারার বাজেট। এটি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের পকেট ভারী করার বাজেট। এ বাজেটে সাধারণ মানুষের কোনো কল্যাণ হবে না। এতে গরিব মানুষ আরও গরিব হবে, আর আওয়ামী লীগ নেতারা আরও ধনী হবেন।’
বাজেট প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি নেতা রইচ বলেন, ‘আমার দলেরও উচিত প্রত্যাখ্যান করা। এই বাজেট আওয়ামী লীগের কর্মীদের প্রোভাইট করার জন্য করা হয়েছে। তারা জনগণের জন্য চিন্তা করে না। নিজের চিন্তা করে, যা ইচ্ছা তা-ই করে, বাজেটেও তা-ই করা হয়েছে।’প্রস্তাবিত বাজেটকে উন্নয়নমুখী উল্লেখ করে নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যত উন্নয়ন হয়েছে, তা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার যুগোপযোগী বাজেটে দেশ সমৃদ্ধ হচ্ছে।’নীলফামারীর উন্নয়নের উদাহরণ টেনে কামাল আহমেদ বলেন, ‘সৈয়দপুর এয়ারপোর্ট আন্তর্জাতিক মানের হচ্ছে, উত্তরা ইপিজেডে বিনিয়োগ বেড়েছে, গ্যাসলাইন হচ্ছে, চিলাহাটি স্থলবন্দর চালু হচ্ছে। এবারের বাজেটের ফলে নীলফামারীর সক্ষমতা আরও বাড়বে।’বাজেটকে গণবিরোধী আখ্যা দিয়ে নীলফামারী জেলা বিএনপির সভাপতি আলমগীর সরকার বলেন, ‘বাজেটে উন্নয়নের নামে লাভবান হচ্ছে আওয়ামী লীগের লোকজন। লুটপাট হচ্ছে সারা দেশে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। বাজেট জনগণের জন্য নয়, আওয়ামী লীগের।’
ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মু. সাদেক কুরাইশী বলেন, ‘করোনার থাবা থেকে মানুষকে বাঁচানোর পাশাপাশি অর্থনীতি সচল রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ সরকারের। এই বাজেটে এ বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
‘বিনিয়োগ ও উন্নয়নে বাজেটের ৩২ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রধান লক্ষ্য হিসেবে দেখানো হয়েছে, পিছিয়ে পড়া মানুষ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং তাদের জীবনমান ও জীবিকার উন্নয়ন।’
প্রস্তাবিত বাজেটকে ৯৯ শতাংশ মানুষের স্বার্থবিরোধী মন্তব্য করে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিন বলেন, ‘করোনা মহাবিপর্যয়কালে মানুষকে বাঁচানোর জন্য স্বাস্থ্যখাতের প্রাধান্য পাওয়া উচিত ছিল, প্রকৃত অর্থে তা করা হয়নি।’
লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান বলেন, ‘এটি দেশের স্বপ্নপূরণের বাজেট। এই বাজেট উন্নয়ন ও করোনা মহামারির থেকে রক্ষার বাজেট। দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে গেলে এ বাজেটের বিকল্প নেই।’প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘এ বাজেট শিল্পবান্ধব ও শিক্ষাবান্ধব। এটি বাস্তবায়ন হলে ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।’
প্রস্তাবিত বাজেটকে উচ্চাভিলাষী উল্লেখ করে লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বাবলা বলেন, ‘এ সরকার প্রতিবারই অনেক টাকার বাজেট ঘোষণা করে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়। প্রতিবারই ঘাটতি রয়ে যায়। কালোটাকা সাদা করে সরকার নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়েছে। এবারের বাজেটও লক্ষ্যহীন।’