আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে আগামী অর্থবছরের বাজেটে। এর সঙ্গে নতুন বাজেটে আবাসন খাতের অন্যতম প্রধান দুই পণ্য রড ও সিমেন্টের কাঁচামালে আমদানি শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে আবাসন খাতের ব্যয় কমার কথা। কিন্তু এর সুফল নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বর্তমানে আবাসন খাতে কোনো ধরনের প্রশ্ন ছাড়াই অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। দেশের সিমেন্ট শিল্পে যে পাঁচ ধরনের কাঁচামাল প্রয়োজন হয়, তার সবগুলোই আমদানি করতে হয়। এসব কাঁচামালে ৩ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হয়। আবার ৩ শতাংশ উৎসে করও দিতে হয়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের অন্যতম উপকরণ সিমেন্ট, লোহা ও লোহাজাত পণ্য। এসব পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত শিল্প প্রতিষ্ঠানকে কর সুবিধা দেওয়া হলে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ সহজ ও সাশ্রয়ী হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিমেন্ট উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে কর হার ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। একই সঙ্গে সিমেন্ট, লোহা ও লোহাজাত পণ্য সরবরাহের বিপরীতে উৎসে কর কর্তনের হারও ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।
‘আশা করছি এর ফলে দেশে এসব শিল্পের আরও বিকাশ হবে এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নেও অবদান রাখবে পারবে।’
একই সঙ্গে ইস্পাতের (রড) ওপর সুনির্দিষ্ট শুল্ক টনপ্রতি ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে লৌহজাত পণ্য তৈরিতে ব্যবহার্য কাঁচামাল, স্ক্র্যাপ ভেসেল ও পিভিসি ও পিইপি রেজিন উৎপাদনের ক্ষেত্রেও শিল্পের উপকরণে কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
তবে বাজেটে কর ছাড়ের প্রস্তাবের প্রভাব পণ্য মূল্যে নাও পড়তে পারে বলে মনে করেন অবাসন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এমনিতেই বিশ্ববাজারে আবাসন খাতের কাঁচামালের মূল্য অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। দেশেও এসব পণ্যের দাম অনেক বেশি। তাই শুল্ক ও কর ছাড়ের কারণে হয়তো দর আর বাড়বে না। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম না কমলে তার সুফল সহসাই দেখা যাবে না।
তারা বলছেন, সিমেন্টশিল্পে পাঁচ ধরনের কাঁচামালের মধ্যে ৬২ শতাংশই হলো ক্লিংকার। গত অর্থবছরও দেশে ১ কোটি ৮৭ লাখ টন ক্লিংকার আমদানি হয়েছে। আগের বছরের চেয়ে টনপ্রতি ৫ ডলার বেড়েছে ক্লিংকারের দাম। আবার রডের ক্ষেত্রে টনে বেড়েছে প্রায় ১৫০ ডলার। এতে দেশে রডের দাম প্রতি টনে ৭০ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে, যা সাধারণ সময় ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।
আবাসন খাতের ব্যববসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, ‘আমাদের মূল চাওয়া ছিল আবাসন খাতে যেন অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা বহাল থাকে। সে চাওয়াটা পূরণ হয়েছে, বাজেটে সে সুবিধা রাখা হয়েছে, যা এ খাতের জন্য আশার কথা। এর সঙ্গে সহায়ক পণ্য রড সিমেন্টের কাঁচামালেও শুল্ক ছাড় দেয়া হয়েছে।
‘তবে এগুলোর সুফল এখনই পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের যে পরিমাণ দাম বেড়েছে, তাতে শুল্ক ছাড় কী পরিমাণ প্রফেক্ট ফেলবে, তা এখনও বুঝতে পারছি না। বাজেট পরবর্তী আন্তর্জাতিক বাজার কেমন যায়, তাও দেখতে হবে। তবে যেহেতু বাজেট এক বছরের, তাই এর মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজার স্বভাবিক হলে তার প্রভাব বেশি পড়তে পারে।’