করোনা মোকাবিলা এবং করোনা থেকে ফিরে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য যে বাজেট প্রয়োজন ছিল প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন নেই বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।
সংস্থাটি বলছে, করোনাকালীন এই বাজেট ‘দুর্বল অনুমিতি’ এবং বাস্তবায়নের সীমাবদ্ধতা চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করেন। এর পরপরই ভার্চুয়ালি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সিপিডির অভিমত তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, ‘এটা অতিমারির দ্বিতীয় বাজেট। কারণ, আমরা এখনো করোনার প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারিনি। চলতি অর্থবছরের পুরো সময় করোনাকাল। এ সময় সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সরকারি বিনিয়োগ এবং ব্যয় বাড়িয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কোভিড থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে একটি মধ্যময়োদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা দরকার।’
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘খাতওয়ারি বিষয়ের মধ্যে সবার আগে আসে স্বাস্থ্যখাত। স্বাস্থ্যখাতের মূল বিষয় এখন টিকাদান। সেজন্য টিকাদান কর্মসূচি সবার জন্য, যারা যোগ্য সবাইকে টিকা দিতে হবে। টিকাদানের জন্য বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে, এটা পর্যাপ্ত নয়। বাজেটে স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ গত বছরের মতোই রাখা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ জিডিপির দশমিক ৮৩ শতাংশ ছিল। এ বছরেও দশমিক ৮৩ শতাংশ রয়েছে।
‘প্রস্তাবিত বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২০ শতাংশ ধরা বাস্তবোচিত হয়নি। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির দেখানো হয়েছে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ। অর্থনীতির অন্যান্য যেসব সূচক দেখা যাচ্ছে, সেই সূচকের প্রেক্ষিতে এটা একটু বেশি। এটা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা খুব কম’।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘রাজস্ব আয়, ব্যয় এবং বিনিয়োগ ইত্যাদির যে কাঠামো দেয়া হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত হয়নি। রাজস্ব কাঠামোতে বড় ধরনের তেমন পরিবর্তন নেই। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ শতাংশ বাড়াতে হবে। এটাও অনেকটা বেশি।’
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আয়করের সীমা ওপরের দিকে বাড়ানো হয়নি। একইভাবে নিচের দিকের সীমা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এর ফলে কর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। নিচের দিকে আয়করের সীমা আর একটু বাড়ালে ভোগ ব্যয় বাড়ত। তা বিনিয়োগে সহায়তা করতে পারত। অর্থাৎ পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে পারত।’
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সামান্য কিছু ভাতা ও বরাদ্দ বেড়েছে, কিন্তু সেখানে আগের মতোই সরকারি কর্মচারীদের পেনশন রয়েছে। এখানে পেনশন যতটা বেড়েছে, সামাজিক নিরাপত্তার আসল যে অংশ সেখানে নিট ততটা বাড়েনি। সুতরাং এখানে বরাদ্দ আরও বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’
বাজেটে অর্থায়নের ক্ষেত্রে বিদেশি ঋণের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা ভালো হয়েছে। রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে যেসব নীতিমালা করা হয়েছে, সেখানে ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে নয়, প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে করা হয়েছে। এটা ইতিবাচক। একইসঙ্গে এসএমইকে স্বল্পসুদে ঋণ দেয়া হবে, এটাকে আমরা সমর্থন করছি।’