বৈধ পথে (ব্যাংকিং চ্যানেলে) প্রবাসী আয় পাঠানোকে উৎসাহিত করতে আগামী অর্থবছরেও এ খাতে ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় তিনি এ প্রস্তাব দেন।
পাশাপাশি ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয়প্রবাহ বৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক বিশেষ প্যাকেজ কর্মসূচি চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রবাসী আয় এসেছে ২২.৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা আগের বছরের চেয়ে ৪০.১ শতাংশ বেশি। মূলত প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রবাসী আয়ের ওপর ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা অব্যাহত রাখা এবং অর্থ পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজীকরণের ফলে প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে এই ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে।
‘কোভিড-১৯ মহামারিকালে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দাজনিত কারণে রপ্তানি বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি নিয়ে আমরা যখন অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, তখন প্রবাসী আয়ের এই অভাবনীয় সাফল্য আমাদের স্বস্তির মধ্যে রেখেছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশগামী কর্মীদের নিরাপদ অভিবাসন সম্মানজনক পেশা নিশ্চিতকরণ, বিশ্ব শ্রমবাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে ব্যাপক বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং বৈধ পন্থায় প্রবাসী আয়ের প্রবাহ নিশ্চিতকরণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের সুফল মিলতে শুরু করেছে।
‘বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারি সত্ত্বেও ২০২০ সালে ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৬৯ জন বাংলাদেশি কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে। বাংলাদেশ প্রথাগত শ্রমবাজারের বাইরে পূর্ব ইউরোপের দেশ পোল্যান্ড, আলবেনিয়া, রোমানিয়া, স্লোভেনিয়া, বসনিয়া-হারজেগোবিনা এবং এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, ভিয়েতমান ও কম্বোডিয়ায় নতুন শ্রমবাজার হিসেবে কর্মী পাঠানো শুরু হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, নারী কর্মীদের বৈদেশিক কর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে জেলা পর্যায়ে ৩০ দিনব্যাপী আবাসিক প্রশিক্ষণ দেয়া, নারী কর্মী নির্বাচন এবং ওরিয়েন্টেশন কার্যক্রম জেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণ ও বিকেন্দ্রীকরণ, বিএমইটিতে ‘নারী কর্মী অভিযোগ ব্যবস্থাপনা সেল’ ও বিদেশে ‘সেফ হোম’ স্থাপনের ফলে তাদের বৈদেশিক কর্মসংস্থান উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালে করোনা মহামারির প্রকোপ থাকা সত্ত্বেও ২১ হাজার ৯৩৪ জন বাংলাদেশি নারী কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে।
বিদেশে গমনেচ্ছু, বিদেশগামী ও প্রত্যাগত কর্মীদের অভিবাসনবিষয়ক অভিযোগ বিভিন্ন মাধ্যমে গ্রহণ ছাড়াও পৃথক একটি পোর্টালের (www.ovijogbmet.org) মাধ্যমে গ্রহণ করে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। বিএমইটির কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট, ইমিগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট, এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট, হিউম্যান রিসোর্ট ম্যানেজমেন্টসহ ১৭টি মডিউল তৈরি করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী জানান, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন-২০১৩ অনুযায়ী, ডাটা ব্যাংক থেকে কর্মী নিয়োগে পেশাভিত্তিক ডাটাবেজ তৈরির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত রিক্রুটিং এজেন্টগুলোর কার্যক্রম তদারকি করা হচ্ছে।
২০১৯ ও ২০২০ সালে রিক্রুটিং এজেন্টগুলোর বিরুদ্ধে ১ হাজার ২৮৪টি অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে ৫ কোটি ৮৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৮ টাকা আদায় করে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থানের ওপর চাপ কমাতে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮ অনুযায়ী প্রতি উপজেলা থেকে গড়ে ১ হাজার কর্মীকে বিদেশে পাঠানোসহ প্রতিবছর মোট ৭ লাখ হিসেবে ৩ বছরে ২১ লাখ কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
‘এ জন্য ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জনবল সৃষ্টি, আরও ২২টি জেলায় জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস স্থাপন, প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণে বিদেশে আরও নতুন ৭টি শ্রমকল্যাণ উইং স্থাপন এবং ৮টি বিভাগীয় শহরে বিভাগীয় কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের নিজস্ব ভবন স্থাপনসহ মাঠপর্যায়ে বিশ্বমানের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ সুবিধা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে সরকার বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।’