বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘বাজেট বাস্তবায়নকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে’

  •    
  • ৩ জুন, ২০২১ ১৯:৫৬

‘আমাদের যে বাজেট আসে, তা সম্পূর্ণ ব্যবহার করতে পারি না। এই জায়গায় আমরা পিছিয়ে আছি। এজন্য বাজেট বাস্তবায়নকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।’

নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজশাহীর রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দেয়া বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় স্বভাবতই সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে স্বাস্থ্যখাত। এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোয় আওয়ামী লীগ নেতারা প্রকাশ করেছেন সন্তুষ্টি। অপরদিকে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। আবার যা দেয়া হয়েছে তাও বাস্তবায়ন হয় কি না সন্দেহ।

তাদের কথায় উঠে এসেছে কৃষিখাত, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, মহামারির মধ্যে স্বল্প আয়ের মানুষ ও ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা, প্রণোদনা, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ নানা বিষয়।

তবে অনেকেই মনে করেন, বাজেট বাস্তবায়ন করায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বরাদ্দ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তার পূর্ণ বাস্তবায়ন হয় না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আমাদের যে বাজেট আসে, তা সম্পূর্ণ ব্যবহার করতে পারি না। এই জায়গায় আমরা পিছিয়ে আছি। এজন্য বাজেট বাস্তবায়নকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।’

স্বাস্থ্যখাত নিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে যে সমস্যাটা হয় সেট হলো, সঠিক জায়গায় অর্থের ব্যবহার এবং পরিমাণমত ব্যবহার হয় না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সবাইকে অনুরোধ করব, এবার চোখে আঙুল দিয়ে স্বাস্থ্যবিভাগের যে ফাঁক-ফোকরগুলো দেখা গেল, সেগুলোকে যেন এবারের বাজেটের মাধ্যমে উত্তোরণ ঘটাতে পারি।’

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, ‘বাজেটে সরকার সিলিন্ডার গ্যাসের দাম কমিয়েছে। কোভিডের ক্ষেত্রে বাজেট বাড়িয়েছে; প্রণোদনার ব্যবস্থাও করেছে। এই বাজেটের আকার যা তাতে মনে হচ্ছে, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে।

তিনি আরও বলেন, ‘মেগা প্রজেক্টগুলো করোনার সময় একটু স্লো হয়ে গেছে। আমাদের রাজশাহীর অনেক দাবিই প্রধানমন্ত্রী পূরণ করেছেন। আমাদের বিমানবন্দর প্রশস্ত করা, রাস্তাঘাট এসব করে দিয়েছেন। আমাদের অনেক কাজের ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ হয়ে গেছে।

‘আমাদের বিসিক-২ এর কাজ চলছে। দ্বিতীয় অর্থনৈতিক জোন হলে আমাদের কর্মসংস্থান অনেক বাড়বে।’

রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল অবশ্য মনে করেন বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ যথেষ্ট নয়।

তার দাবি, করোনা মহামারির মধ্যে বাজেটের যে সম্ভাব্যতা যাচাই করা উচিত ছিল, সেটি এখনও হয়নি। গত এক বছর স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো উন্নয়ন হয়নি। দেশকে রক্ষায় স্বাস্থ্যবিভাগের জন্য আলাদা বিশেষ বাজেট দেয়া উচিত ছিল।

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি উপজেলাতে পাঁচটি করে আইসিইউ ও জেলাতে ২৫টি আইসিইউ শয্যা দেয়া উচিত। এটি এখনই প্রকল্পের মাধ্যমে আসা দরকার ছিল। আমার মনে হয় এটি এই বাজেটে আসেনি। একটি থোক বরাদ্দ যথাযথ মনে করছি না।’

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি সাহসী বাজেট হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘একটি ভালো বাজেট হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা লাগবে। এটি ব্যবসায়ীদের জন্য ভালো বাজেট। কৃষি বিভাগের জন্য ছাড় দিয়েছে। এটি আমাদের উপকারে আসবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই অঞ্চল কৃষি আর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের এলাকা। বাজেটে কৃষিতে ছাড় দেয়ায় ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। করোনার মধ্যে এত বড় বাজেট দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।’

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনবান্ধব নেত্রী। তিনি সব সময় জনগণের ভালোর জন্য কাজ করছেন। দেশের জন্য কাজ করছেন। সুতরাং এই বাজেটও জনমুখী হবে।’

বগুড়া হোটেল মোটেল অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান বলেন, ‘সারা দেশের উন্নয়ন ঘটাতে গেলে সুষম বাজেটের কোনো বিকল্প নেই। আপাতত মনে হচ্ছে এই বাজেট গণমুখী হবে। তবে বিস্তারিত না পড়ে মন্তব্য করা কঠিন।’

বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বগুড়া ৬ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মো. সিরাজ বলেন, ‘বাজেট সম্পর্কে দলীয়ভাবে এখন মন্তব্য করা যাবে না। আগামীকাল এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাব।’

নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি উমা চৌধুরী জলি বলেন, ‘এই বাজেটে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। বিশেষ করে কৃষিখাত ও স্বল্প আয়ের মানুষকে সুরক্ষা দেবার ব্যবস্থা রেখেছে সরকার। এ বাজেট জনকল্যাণমুখী।’

ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, ‘চলতি বাজেটে ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়েছে। করোনার সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই ব্যবসা ক্ষেত্রে বাজেটে বাড়তি নজর দেয়া উচিত ছিল।’

সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, বাজেট হতে হবে জনকল্যাণমুখী। কোনো শুভঙ্করের ফাঁকি বা ভাউতাবাজির বাজেট নয়।

‘ইতোপূর্বে এ রকম বাজেট হওয়ার কারণে দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা কালো টাকার পাহাড় গড়তে পেরেছেন।’

সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কে এম হোসেন আলী হাসান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে, দেশের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে বাজেট ঘোষণা করে থাকে। এবারও একইভাবে সুন্দর একটা বাজেট ঘোষণা হয়েছে। এজন্য অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।’

সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইমদাদুল হক বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ জেলাটি তাঁত শিল্পে সমৃদ্ধ। গত দুই বছর ধরে তাঁতশিল্পে দুর্দিন যাচ্ছে। তাঁতীরা আজ তাঁত বিক্রি করে অন্য পেশা খুঁজছেন।

‘তাঁত শিল্পকে রক্ষা করতে ব্যবসায়ীদের প্রণোদনাসহ সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সুন্দর একটা বাজেট আমরা চাই।’

নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নির্মূল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘মহামারি অর্থনীতির অনেকখাতে আঘাত হেনেছে। কিন্তু দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য এবার এই বিশাল বাজেট জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে।

‘আওয়ামী লীগ সরকার চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করে। এটা মহামারির সময়ে এত বড় বাজেটে প্রমাণ হয়। এটি দেশের সকল মানুষের কল্যাণে ভূমিকা রাখবে।’

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাজমুল হক সনি বলেন, ‘বাজেটের আকার বড় কিন্তু বাজেটের সঠিক বণ্টন হয় না। স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো প্রয়োজন, কিন্তু স্বাস্থ্যখাত তো দুর্নীতির আখড়া।

‘অন্যদিকে করোনার এই সময় আরও বেশি অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষের সুরক্ষার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেয়া উচিত ছিল। এই বাজেটের অর্থ সঠিকভাবে পরিচালনা হবে কি না তা নিয়েও সন্দেহ আছে।’

নওগাঁর ব্যবসায়ী এনামুল হক বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতির মধ্যেও এবার বড় বাজেট পেশ করা হয়েছে। আশা করছি যদি সঠিকভাবে দেশের উন্নয়নকল্পে ব্যয় হয়, তবে মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে।’

জয়পুরহাট-১ আসনে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদু বলেন, ‘প্রতি বছরই আওয়ামী লীগ সরকার জনবান্ধব বাজেট পেশ করেছে। এবারও তার প্রতিফলন থাকবে। কারণ জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার সর্বসাধারণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।’

জয়পুরহাট জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক তিতাস মোস্তাফা জানান, ‘সরকার ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয় কীভাবে বাড়ায় তা দেখার বিষয়। পাশাপাশি তা যেন হয় জনকল্যাণকর।

‘জনগণের ওপর যেন করের বেশি বোঝা না চাপানো হয়। কারণ করোনার ধকলে স্থানীয়দের অর্থনীতির মেরুদণ্ড একবারে ভেঙ্গে পড়েছে।’

প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন বগুড়া প্রতিনিধি খোরশেদ আলম, নাটোর প্রতিনিধি নাজমুল হাসান, নওগাঁ প্রতিনিধি সবুজ হোসেন, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি গোলাম মোস্তফা রুবেল, জয়পুরহাট প্রতিনিধি রাজীব হাসান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি আব্দুর রব নাহিদ।

এ বিভাগের আরো খবর