দেশীয় শিল্পের বিকাশ ধরে রাখতে ফ্রিজ, এয়ারকন্ডিশনার, এলপিজি সিলিন্ডার, মোটর কার, মোটর ভেহিক্যালসহ বিভিন্ন উৎপাদনমুখী শিল্পে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) অব্যাহতি সুবিধা বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা এক থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বর্তমানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার কম্প্রেসার উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহিত সুবিধা পাচ্ছে। নতুন বাজেটে এই সুবিধা আরও একবছর বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বর্তমানে এয়ারকন্ডিশনারের কম্প্রেসার উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেয়া হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যমান সুবিধা তিন বছরের জন্য বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
মোটরকার, মোটর ভেহিক্যাল উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা পাঁচ বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এলপিজি সিলিন্ডারে বর্তমানে রেয়াতি হার (৫ শতাংশ) ভ্যাট আরোপ আছে। নতুন বাজেটে এই পণ্য উৎপাদনে একই সুবিধা বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ভ্যাটের বোঝা লাগব করার জন্য দেশীয় উৎপাদিত টাইলসের পরিবেশক ও ডিলারদের জন্য শুধুমাত্র নীট কমিশনের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্থানীয়ভাবে মুড়ি উৎপাদন উৎসাহিত করতে এ খাতে উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। স্থানীয়ভাবে যারা তাজা ফলের ব্যবসা করবেন তাদেরকেও ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়ভাবে মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনকারীদের জন্যও ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা দুই বছরের জন্য বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পকে উৎসাহিত করতে এবং এ শিল্পের বিকাশ ধরে রাখতে মূলধনী যন্ত্রপাতি উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়।
রড বা স্টিলসহ লৌহজাত পণ্য প্রস্তুতে কাঁচামাল যেমন: স্ক্র্যাপ ভেসেল এবং পিভিসি ও পিইটি রেনজিং আমদানিতে বর্তমানে আগাম কর আছে। নতুন বাজেটে ওইসব কাঁচামালের ওপর থেকে আগাম কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে রড ও স্টিল উৎপাদনের খরচ কমবে এবং ক্রেতারা এসব পণ্য বর্তমানের চেয়ে কম দামে কিনতে পারবে।
দেশীয় স্পিনিং মিলকে আরও বিকশিত করার লক্ষ্যে এই শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল ‘পেপার কোন’ এর ওপর ভ্যাট ১৫ শতাংশ কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।
মেডিটেশন সেবার জন্যও সুখবর দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এই সেবার ওপর বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা আরও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
সুরক্ষা সামগ্রীতে ভ্যাট সুবিধা
করোনা মহামারি মোকাবিলায় ব্যবহৃত সুরক্ষা সামগ্রী আমদানি যেমন: টেস্ট কিট, পিপিই, ভ্যাক্সিন আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে ওই সব পণ্য সস্তা হবে, যা করোনা প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে কর সুবিধা
বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে প্রস্তাবিত বাজেটে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্য ও যন্ত্রাংশের ওপর ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে।
পণ্যগুলো হলো: প্রিন্টার, টোনার, কার্টিস, কম্পিউটারের প্রিন্টারের যন্ত্রাংশ, কম্পিউটার ল্যাপটপ, ডেক্সটপ, নোটবুক, নেটপ্যাড, ট্যাব, সার্ভার কী বোর্ড, মাউস, বারকোড, কিউআর স্ক্রেনার, র্যাম, মাদারবোর্ড, পাওয়ারব্যাংক, রাউটার, নেটওয়াক সুইচ, মডেম, নেটওয়াক ডিভাইস, স্পিকার, সাউন্ড সিস্টেম, এয়ারফোন, হ্যাডফোন, হার্ডডিস্ক ডাইভ, পেনড্রাইভ, মাউক্রো এসডি কার্ড, ফ্লাস, মেমোরি কার্ড, সিসি টিভি, মনিটর, প্রজেক্টর, ই রাইটিংপ্যাড, ইউএসবি ক্যাবল, ডাটা ক্যাবল ইত্যাদি।
উল্লেখিত পণ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করলে কোনো ভ্যাট দিতে হবে না। ফলে এসব পণ্য সস্তা হবে, এবং গ্রাহক কম দামে পণ্যগুলো ক্রয় করতে পারবে।