আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতে ৫ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। বরাদ্দ থাকছে ৭১ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৬৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
চলতি শিক্ষা বাজেটের চেয়ে বরাদ্দ বেড়েছে ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি। তবে শিক্ষাবিদরা শিক্ষা খাতের জন্য প্রস্তাবিত এ বরাদ্দকেও অপ্রতুল বলছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বৃদ্ধিকে অত্যন্ত সামান্যই বলা যায়। আমরা আশা করেছিলাম বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে একটা উল্লম্ফন ঘটবে। কিন্তু সেটি হচ্ছে না। এটা দুর্ভাগ্যজনক।
‘বঙ্গবন্ধু সেই কবে ঘোষণা করেছিলেন, তিনি শিক্ষা খাতে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ চান। তার সময়ে তৈরি কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন তাদের রিপোর্টে বলছে, শিক্ষা খাতে মোট বাজেটের ৫ থেকে ৭ শতাংশ দরকার। বঙ্গবন্ধুর দলটিই এখন ক্ষমতায়, কিন্তু তারা শিক্ষা খাতে মোট বাজেটের ২ শতাংশের বেশি কিছুতেই বরাদ্দ বাড়াচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষা খাত। যদি সত্যিকার অর্থে এই ক্ষতি আমরা মোকাবিলা করতে চাই এবং অনলাইন-অফলাইন শিক্ষাকে সক্ষমতার পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই, তাহলে সেখানেই তো কয়েক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া উচিত।’
শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজেটে শিক্ষায় যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তা অপর্যাপ্ত। শিক্ষায় একদমই যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। কলকারখানা বন্ধ হলে এবং শ্রমিকরা বিদেশে যেতে না পারলে আমরা সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি, কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাচ্ছে না, সে বিষয়ে মনে হয় কেউ উদ্বিগ্ন নয়। এ উদাহরণ থেকেই আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে শিক্ষায় যথাযথ গুরুত্ব দিই না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দা তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘করোনার এই সময়ে অনলাইন এডুকেশনকে গুরুত্ব দেয়া উচিত ছিল। অন্যান্য দেশে করোনার সময়ে শিক্ষা খাতে কী করা হচ্ছে, সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করে বাজেট বাস্তবায়ন করা উচিত।’
স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের (স্বাশিপ) সাধারণ সম্পাদক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু বলেন, ‘বাজেটে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই এ বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য।’
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এই বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৬ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এই বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। একই মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৮ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা।
বাজেট বক্তৃতায় অথর্মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘কোভিড-১৯ অভিঘাতের এই ক্রান্তিকাল কাটিয়ে উঠে শিক্ষার উন্নয়নকে আরো বেগবান করার লক্ষ্যে গত অর্থবছরে ঘোষিত অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি বর্ধিত চাহিদার প্রেক্ষিতে আমরা আমাদের চলমান কার্যক্রম যেমন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে উপবৃত্তি প্রদান, পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষা-উপকরণ বিতরণ ইত্যাদির পরিধি বাড়াব। পাশাপাশি প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করা ও দক্ষ বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা প্রসারে কার্যক্রম বাস্তবায়নে নজর দেব আমরা।
‘সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অর্জনের ধারাবাহিকতায় অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার শিক্ষা খাতের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে প্রাধান্য দেব ও গুরুত্ব অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বরাদ্দও রাখছি। পাশাপাশি ব্যয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধির ও তা পরিবীক্ষণের দিকেও আমরা গুরুত্ব দেব।’
ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম চালু
প্রস্তাবিত বাজেটে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম চালুর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর আমাদের দেশে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে চাকরির ক্ষেত্রে প্রবেশের উপযোগী হচ্ছে। এসব সদ্য গ্র্যাজুয়েট যাতে সহজেই স্বীয় ক্ষেত্রে চাকরি পেতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টরের মাধ্যমে তাদের জন্য ইন্টার্নশিপ কার্যক্রম চালুর ওপর জোর দেবে। সে লক্ষ্যে আমি ঘোষণা প্রদান করছি যে, এই ইন্টার্নশিপ কার্যক্রম অবিলম্বে চালুর জন্য আগামী অর্থবছরে এ বিষয়ে একটি পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়ন করা হবে।’
মোটিভেশনাল ও সেনসিটাইজেশন কার্যক্রম
প্রস্তাবিত বাজেটে নিরক্ষর ব্যক্তিদের জন্য মোটিভেশনাল ও সেনসিটাইজেশনাল কার্যক্রম শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের দেশে শিক্ষার বাইরে আছে এমন নিরক্ষর ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের জন্য মোটিভেশনাল এবং সেনসিটাইজেশন কার্যক্রম গ্রহণের প্রচেষ্টা নেয়া হবে। এই কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হবে উক্ত ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়াদি, যেমন স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক তথ্য, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, কোয়ালিটি অফ লাইফ, যথোপযুক্ত শিক্ষার গুরুত্ব ইত্যাদি সম্পর্কে সেনসিটাইজ করা এবং তাদের অনুপ্রাণিত করা, যাতে তারা তাদের সন্তানদের এসব বিষয়ে সম্যকভাবে সেনসিটাইজ করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এ লক্ষ্যে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোকে শক্তিশালীকরণের উদ্যোগ নেয়া হবে এবং তাদের মাধ্যমে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।’