বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঋণের সুদই দুটি পদ্মা সেতুর সমান

  •    
  • ৩ জুন, ২০২১ ১৬:০৮

ঘাটতি মেটাতে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিতে হয় সরকারকে। এ কারণে প্রতিবছর সরকার বাজেটে অনুন্নয়ন খাতে যে বরাদ্দ রাখে, তার বড় অংশই চলে যায় সুদ পরিশোধজনিত খাতে।

সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি খরচ হবে ঋণের সুদ পরিশোধে, যার পরিমাণ ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটে প্রস্তাবিত ব্যয়ের ১১.৩৬ ভাগ।

সুদ পরিশোধে ব্যয় করা এই অর্থ দেশে বাস্তবায়নাধীন পদ্মা সেতু নির্মাণ খরচের দ্বিগুণেরও বেশি। বর্তমানে প্রমত্তা পদ্মার দুই পাড় সংযুক্ত করা সেতুর সার্বিক নির্মাণ খরচ হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়নে সরকারকে ঘাটতি ব্যয় সামলাতে হবে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬.২ শতাংশ।

এই ঘাটতি অর্থ পূরণে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা ঋণ করতে হবে অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ব্যবস্থাসহ অন্যান্য খাত থেকে। ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা ঋণ করা হবে বিদেশি উৎস থেকে। বাকি ঘাটতি পূরণ করা হবে বিদেশি অনুদানের মাধ্যমে।

ঘাটতি পূরণে ঋণের সুদ পরিশোধ ব্যবস্থায় অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ খরচ দিতে হবে ৬২ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ ব্যয় হবে ৬ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।

বিদেশি উৎসের তুলনায় অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বেশি। কিন্তু সরকার বিদেশি উৎস থেকে আশানুরূপ ঋণ না পাওয়ায় বেশি সুদ দিয়ে অভ্যন্তরীণ ঋণেই বেশি ভরসা রাখছে। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে এবার বিদেশি ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রাও বেড়েছে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের বাজেটব্যবস্থা জন্মলগ্ন থেকেই ঘাটতিনির্ভর। রাষ্ট্রের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিরাট খরচ জোগানো এবং সেই খরচ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অর্থ বিদ্যমান রাজস্ব ব্যবস্থার মাধ্যমে উঠে না আসায় প্রতিবছরই প্রস্তাবিত বাজেটে আয়-ব্যয়ের একটা বড় ফারাক তৈরি হচ্ছে, যাকে ঘাটতি বাজেট বলা হয়।

সরকারকে ঘাটতির অর্থ জোগাতে ঋণ করতে হয়। আর সেই ঋণের জন্য গুনতে হয় মোটা অঙ্কের সুদ। আবার ঘাটতি মেটাতে এই বিপুল পরিমাণ ঋণ নেয়ার কারণে প্রতিবছর সরকার বাজেটে অনুন্নয়ন খাতে যে বরাদ্দ রাখে, তারও বড় অংশই চলে যাচ্ছে এই সুদ পরিশোধজনিত খাতে।

বাজেট বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের প্রায় ৬০ ভাগ ব্যয় হবে পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে। এর পরিমাণ ৩ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ১৩ হাজার ৩২০ কোটি টাকা এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৩৭ হাজার ৮১২ কোটি টাকা বেশি।

এদিকে চলতি বা বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে সুদ পরিশোধ খাতে সুদ ভর্তুকি রাখা হয় ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা, যা ছিল মোট বাজেট ব্যয়ের ১১.২৩ শতাংশ। তবে সংশোধিত বাজেটে এই ব্যয় আরও বাড়ানো হয়েছে। এতে সুদ খাতে খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। তা সত্ত্বেও সংশোধিত বাজেটের হিসাব থেকেও প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য সুদ খাতে ব্যয়ের খরচ ৪ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকা বেশি।

একইভাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরেও সুদ পরিশোধে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছিল ৫৭ হাজার ৭০ কোটি টাকা, যদিও সংশোধিত বাজেটে তার আকার বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সুদ ভর্তুকি ব্যয় ছিল ৪৯ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। তারও আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সুদ পরিশোধে খরচ হয়েছে ৪১ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সুদ পরিশোধ খাতে খরচ ছিল ৩৫ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা, যা ২০১৫-১৬ সালে ছিল ৩৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা।

সুদ পরিশোধ খাতে কেন এত বেশি খরচ হচ্ছে, এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গত কয়েকটি বছরের সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ছাড়াও জনক্যাণমুলক পদক্ষেপগুলো পর্যালোচনা করা হয়। এতে দেখা যায়, সরকারের উন্নয়নমুখী অভিযাত্রায় বেশি কিছু ভিশন রয়েছে। ইতিমধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বাস্তবায়ন হয়েছে। এখন চলছে ২০৩০ সালে পর্যন্ত জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের উদ্যোগ। এছাড়া ২০২৭ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের লক্ষ্যও রয়েছে। সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য হচ্ছে, ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে বিশ্বে উন্নত দেশের কাতারে প্রতিষ্ঠা করা।

এসব লক্ষ্য বাস্তবায়নে একদিকে যেমন ব্যাপকভাবে অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে, অন্যদিকে শিল্পায়ন ও বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি অধিকতর কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের জীবনমানও প্রভূত উন্নত করতে হবে। গত এক দশক ধরে সরকার সেই সব লক্ষ্য অর্জনেই কাজ করছে।

এরই ধারাবাহিকতায় দেশে এখন পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্র বন্দরসহ সারা দেশে মহাসড়কগুলো দুই লেন থেকে চার লেন, ছয় লেন বিশিষ্ট করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও হচ্ছে আট লেনও। এর বাইরে সামাজিক নিরাপত্তামুলক ব্যাপক কর্মসূচি রয়েছে সরকারের।

অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট করোনা পরিস্থিতিতে সরকারকে মানুষের জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক রাখতে সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি আরও জোরালো করতে হচ্ছে। এর পাশাপাশি টেকসই কৃষি, খাদ্য, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দসহ প্রণোদনা বাড়াতে হচ্ছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহি পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে জানান, বাংলাদেশে অর্থনীতিতে উন্নয়নের চাহিদা অনেক বেশি। সেই তুলনায় উন্নয়ন বাস্তবায়নে অর্থ বা মূলধন কম। কিন্তু গণতান্ত্রিক সরকারকে তো রাষ্ট্রের উন্নয়নের কথা ভাবতে হয়। নানা কল্যাণমূলক উদ্যোগ নিতে হয় জনগণের জন্য।

তাছাড়া রাজনৈতিক সরকার হিসেবে উন্নয়নের জোয়ার তৈরির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও রয়েছে। এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বাজেট ঘাটতি রেখেও সরকারকে উন্নয়নের লক্ষ্যগুলো বড় করতে হচ্ছে। ফলে বিকল্প উৎস্য থেকে টাকা এনে সেই ঘাটতি চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে। যার কারণে গুণতে হচ্ছে এই বিরাট অংকের সুদ। তবে বিদেশি উৎস থেকে ঋণের যোগান আরও বাড়াতে পারলে সুদখাতে ভর্তুকি কমে আসবে।

তবে করোনা পরিস্থিতিতে বড় বাজেট দরকার আছে। এক্ষেত্রে ঘাটতি বড় হলেও তেমন কোনো ক্ষতি নেই। তবে সব লক্ষ্যই এক সঙ্গে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। তাই সরকারকে পরিস্থিতি বুঝে উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলোর অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে। একইভাবে সে অনুযায়ী বাজেট বাস্তবায়নেও জোর দিতে হবে।

এ বিভাগের আরো খবর