করোনাকালীন দেশের বিনিয়োগ চাঙা করতে করপোরেট করহার কমানো হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে।
দুটি স্তরে করপোরেট করহার কমানো হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে নন-লিস্টেড কোম্পানি, যা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়। অপরটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি।
নন-লিস্টেড কোম্পানির করপোরেট করহার বর্তমানে সাড়ে ৩২ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে এই হার কমিয়ে ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
অপরদিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহার বর্তমানে সাড়ে ২৫ শতাংশ। এটা কমিয়ে করা হয়েছে সাড়ে ২২ শতাংশ।
অর্থাৎ উভয় ক্ষেত্রে করপোরেট করহার আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছে নতুন বাজেটে।
করপোরেট করহার কমানোর প্রস্তাবে খুশি ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, করপোরেট করহার কমলে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন। এতে করে বাড়বে কর্মসংস্থান। ত্বরান্বিত হবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি।
অন্যদিকে অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, করপোরেট কর কমানোর ফলে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের উৎপাদন খরচ কমবে এবং তারা ফের বিনিয়োগে উৎসাহী হবেন।
সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক ঊর্ধ্বতন পরিচালক ও বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটি ভালো খবর। কারণ, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করপোরেট করহার তুলনামূলক বশি। এই কর কমলে বিনিয়োগ বাড়বে।’
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ‘করপোরেট করহার কমায় ব্যবসায়ীরা খুশি। অনেক দিন ধরে বলা হচ্ছে করপোরেট করহার কমানোর জন্য। সরকার আমাদের কথা শুনেছে।’
অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা একটি বিনিয়োগবান্ধব করনীতি চাই। করপোরেট কর কমানোর ফলে উদ্যোক্তারা মুনাফার একটি অংশ নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারবে। ফলে বাড়বে কর্মসংস্থান।’
করপোরেট কর মানে প্রতিষ্ঠান বছর শেষে মুনাফার ওপর যে কর দেয় সেটা। বাংলাদেশে বর্তমানে পাঁচটি স্তরে করপোরেট কর আদায় করা হয়। সর্বোচ্চ কর হার ৪৫ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ২৫ শতাংশ।
১৯৮৪ সালের আয়কর আইনে করদাতা দুই ধরনের। ব্যক্তিশ্রেণি করদাতা এবং কোম্পানি করদাতা। সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশে ব্যক্তিশ্রেণির চেয়ে কোম্পানি করদাতা কম হলেও এ খাত থেকেই কর বেশি আদায় হয়।
মোট করদাতার মাত্র ২ শতাংশ কোম্পানি করদাতা। তাদের কাছ থেকে মোট আয়কর আদায় হয় ৬৫ শতাংশ। বাকি ৩৫ শতাংশ ব্যক্তিশ্রেণি, উৎসে করসহ অন্যান্য খাত থেকে আদায় করা হয়।
রেজিস্ট্রার অফ জয়েন্ট স্টক কোম্পানির হিসাবে, দেশে দেড় লাখের বেশি কোম্পানি থাকলেও নিয়মিত কর দিচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ৩৫ হাজার।
এখন পর্যন্ত একক খাত হিসেবে ব্যাংক থেকে সবচেয়ে বেশি করপোরেট কর আদায় হয়।
দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তাসহ অর্থনীতিবিদরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, বাংলাদেশে করপোরেট করহার অনেক বেশি। তাদের যুক্তি, করহার কমালে কোম্পানির মুনাফা বেশি থাকবে। ফলে মুনাফার কিছু অংশ পুনরায় বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।
বিনিয়োগ বাড়লে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। এতে জিডিপির প্রবৃদ্ধির গতি বাড়বে।
ভারতসহ পৃথিবীর অনেক দেশে করপোরেট করহার কম এবং কর কাঠামো সহজ।
ভারতে করপোরেট করহার দুটি। বড় কোম্পানির জন্য ৩০ শতাংশ এবং স্থানীয় কোম্পানির ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ।
শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে করপোরেট করহার যথাক্রমে ২৮ ও ৩০ শতাংশ। সিঙ্গাপুরে একটিমাত্র করপোরেট করহার এবং তা মাত্র ১৩ শতাংশ।