বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বড় ঘাটতি মেটাতে বড় ঋণের পরিকল্পনা

  •    
  • ৩ জুন, ২০২১ ১৫:৩০

প্রতিবছর বড় হচ্ছে বাজেটের আকার। তবে ব্যয় বাড়লেও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে না আয়। ফলাফল বড় হচ্ছে ঘাটতির অঙ্ক। আর সে জন্যই বাড়ছে ঋণনির্ভরতা।

করোনাভাইরাস মহামারিতে নতুন অর্থবছরের জন্য বড় ঘাটতি রেখে যে বাজেট প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দিয়েছেন, তা বাস্তবায়ন করতে নির্ভর করতে হবে বড় অঙ্কের ঋণের ওপর।

জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।

এর মধ্যে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা তিনি রাজস্ব খাত থেকে জোগান দেয়ার কঠিন পরিকল্পনা সাজিয়েছেন। তারপরও তার আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ।

ঘাটতির এই পরিমাণ আগের যেকোনো বছরের তুলনায় বেশি। অভ্যন্তরীণ উৎস ও বৈদেশিক ঋণ নিয়ে অর্থমন্ত্রীকে এই ঘাটতি পূরণ করতে হবে। আর সে জন্য নতুন বাজেটে বিদেশি ঋণের নির্ভরতা অনেকটাই বাড়িয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এবার বিদেশ থেকে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা আসবে বলে স্বপ্ন বুনেছেন তিনি। আর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা ঋণ করার পরিকল্পনা জানিয়েছেন কামাল।

প্রতিবছর বড় হচ্ছে বাজেটের আকার। তবে ব্যয় বাড়লেও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে না আয়। ফলাফল বড় হচ্ছে ঘাটতির অঙ্ক। আর সেই জন্যই বাড়ছে ঋণনির্ভরতা।

আর এই ঘাটতি পূরণে বড় নির্ভরতার জায়গা হচ্ছে ব্যাংক। তবে এবার ব্যাংকঋণে নির্ভরতা খানিকটা কমিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বাড়িয়েছেন সঞ্চয়পত্র থেকে ধারের অঙ্ক।

অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আরও ৫ হাজার ১ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে বাজেটে।

এ ছাড়া বাজেটে সম্ভাব্য বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।

বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকিং খাত থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। সঞ্চয়পত্র থেকে প্রচুর ঋণ নেয়ার কারণে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৭৯ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

বিদায়ী বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ধার করার লক্ষ্য ধরেছিলেন অর্থমন্ত্রী কামাল। কিন্তু সঞ্চয়পত্র বিক্রি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সংশোধিত বাজেটে বাধ্য হয়ে তিনি এই খাত থেকে ঋণের অঙ্ক বাড়িয়ে ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা করেছেন।

আর বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটে বিদেশি ঋণের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা ৬৮ হাজার ৪১৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। মহামারির সংকটে অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে সেই বাজেটের গতিপথ আর লাইনে থাকেনি। সংশোধনে তা ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৩ কোটিতে নামিয়ে আনা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ৩০ জুন শেষ হওয়া বিদায়ী অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছে, পরিশোধ করেছে তার চেয়ে বেশি। ফলে সরকারের নিট ঋণগ্রহণ ঋণাত্মক হয়ে গেছে।

নিট হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এপ্রিল পর্যন্ত সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে উল্টো ১৩ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।

এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭২ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা।

ব্যাংক থেকে ঋণ না নিলেও সঞ্চয়পত্র থেকে ছয় মাসেই লক্ষ্যের চেয়ে বেশি ঋণ নিয়ে ফেলে সরকার। ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ করার লক্ষ্য ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়েই (ছয় মাস) ২০ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা নিয়ে ফেলে।

আর অর্থবছরের ১০ মাসে (২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত) মোট ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি ১৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই ৯ মাসে এত টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়নি। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৫২ হাজার ৯৬৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা শোধ করা হয়েছে।

এ হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ২০ কোটি টাকা।

হিসাব-নিকাশ করে দেখা যাচ্ছে, বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে যে টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরেছিল, তার ৬৫ শতাংশ ঋণ ৯ মাসেই নিয়ে ফেলেছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। বিক্রি কমায় বছরের মাঝামাঝিতে এসে সেই লক্ষ্য কমিয়ে ১১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর