বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১২% ব্যয় বাড়িয়ে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট

  •    
  • ৩ জুন, ২০২১ ১৫:২২

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

মহামারির বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে অর্থনীতির ক্ষত সারানোর পাশাপাশি মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষার চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে নতুন অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত এই ব্যয় বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি। আর মূল বাজেটের চেয়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি।

বিদায়ী অর্থবছরে মুস্তফা কামালের দেওয়া মূল বাজেটের আকার ছিল পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। তার আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

গতবারের মতো অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালকে তার তৃতীয় বাজেটটিও দিতে হলো এমন এক সময়ে যখন করোনাভাইরাস মহামারিতে পুরো বিশ্বের অর্থনীতিই টালমাটাল; বাংলাদেশের সামনেও গভীর অনিশ্চয়তা। তাই অর্থমন্ত্রী এবার তার বাজেটের শিরোনাম দিয়েছেন, ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’।

সংক্রমণ এড়াতে সীমিতসংখ্যক আইনপ্রণেতাকে নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় চলছে এবারের বাজেট অধিবেশন। অধিবেশন কক্ষে সংসদ সদস্যদের বসতে হয়েছে দূরত্ব রেখে, মুখে মাস্ক পরে।

গত কয়েক বছরে সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে উন্নয়ন খাতকে। এর মধ্যে কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজের গতি থমকে গেছে করোনাভাইরাসের কারণে।

ফলে এবারের ছয় লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় খুব বেশি না বাড়িয়ে ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৪ শতাংশ বেশি। আর মূল বাজেটের চেয়ে ১০ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। এরই মধ্যে এই এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে।

এবার পরিচালন ব্যয় (ঋণ, অগ্রিম ও দেনা পরিশোধ, খাদ্য হিসাব ও কাঠামোগত সমন্বয় বাদে) ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি। মূল বাজেটের চেয়ে এই ব্যয় বেশি ৩ দশমিক ৮২ শতাংশ।

গত বছরের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর প্রথম তিন মাস ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় স্থবির ছিল; শিল্প উৎপাদনও ছিল গতিহারা। আমদানি-রপ্তানি নেমে এসেছিল তলানিতে। ফলে রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যের চেয়ে অনেক পিছিয়ে পড়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সরকারের ‘জীবন-জীবিকা’ একসঙ্গে চালানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এখন অবশ্য মহামারির মধ্যেও ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প উৎপাদনসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু শঙ্কা কাটছে না। প্রথম ঢেউয়ের পর দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। অনেক জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ।

এরপরও নতুন বাজেটে রাজস্ব আদায়ে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য ধরেছেন মুস্তফা কামাল। তার প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে এনবিআরের মাধ্যমে কর হিসেবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন কামাল। এনবিআর-বহির্ভূত কর থেকে আসবে ১৬ হাজার কোটি টাকা। আর কর ছাড়া অন্যান্য খাত থেকে আসবে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। বিদেশি অনুদান ৩ হাজার ৪১০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে বাজেট প্রস্তাবে হিসাব কষেছেন অর্থমন্ত্রী।

বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। আদায় সন্তোষজনক না হওয়ায় তা সংশোধন করে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৫৩২ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। সংশোধনে তা ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।

অর্থমন্ত্রী সংসদের সামনে যে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেছেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ।

বাংলাদেশে সাধারণত ঘাটতির পরিমাণ ৫ শতাংশের মধ্যে রেখে বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা হলেও গতবারের মতো এবারও তা সম্ভব হয়নি। ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ধরে বাজেট দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। সংশোধিত বাজেটে অবশ্য তা আরও বেড়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশ হয়েছে।

এই ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীর সহায় অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণ। তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি মেটানো যাবে।

অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আরও ৫ হাজার ১ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে বাজেটে।

বিদায়ী অর্থবছরের ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হলেও করোনার মধ্যে তা সংশোধন করে ৬ দশমিক ১ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।

মহামারি পরিস্থিতি মাথায় রেখেই নতুন বাজেটে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছেন মুস্তফা কামাল।

সামনে গভীর অনিশ্চয়তা রেখেই অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, তার নতুন বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে মূল্যস্ফীতি ৫.৪ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখেই ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে।

এ বিভাগের আরো খবর