জলোচ্ছ্বাস এদেশের উপকূলবাসীদের যেন নিত্যসঙ্গী। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জোয়ারের উচ্চতা বাড়লেও তা ঠেকাতে তৈরি করা বাঁধ উঁচু হয়নি এ পর্যন্ত।
উপকূলের জেলা বরগুনার বাসিন্দারা এবারের বাজেটে টেকসই ও উপযোগী বাঁধের জন্য বরাদ্দ চান।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বরগুনা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত জেলায় ৮০৫ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে ১২ ফুট বা তার কম উচ্চতায় ৩০০ কিলোমিটার ও বাকি ৫০০ কিলোমিটারের গড় উচ্চতা ১৩ ফুট বা তার বেশি।
অর্থাৎ নদীতে জোয়ারের পানি ১২ ফুটের বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হলেই এসব এলাকার বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে।
জেলার পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক হাসানুর রহমান ঝন্টু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেলাবাসীর সবার আগে ও সব থেকে জরুরি জীবন এবং সম্পদের নিরাপত্তা। এরই মধ্যে জেলার মানুষের একটি বিরাট অংশ জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা করছে। এই জেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষি ও মৎস্যজীবী। কৃষকদের সুরক্ষার জন্য সবার আগে প্রয়োজন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় কার্যকর ও টেকসই পরিকল্পনা নেয়া। আর এর মধ্যে অন্যতম তাদের জলোচ্ছ্বাস থেকে সুরক্ষা দেয়া।
‘সে ক্ষেত্রে প্রথমেই জেলার ৮০৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণে বাঁধ সংস্কার করে তা টেকসই করতে হবে। একই সঙ্গে নদীভাঙন রোধ, সাড়ে তিনশরও বেশি স্লুইসগেটের টেকসই সংস্কার করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়েই বরগুনাবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জানমালের পাশাপাশি আমাদের কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে আমরা অবশ্যই দাবি করব আমাদের কৃষি বাঁচাতে সরকারের বাজেটে উপকূলীয় এ জেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ টেকসই করা হোক।’
এই জেলার পর্যটন খাতকেও বাজেটে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলছেন এখানকার পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
পর্যটন উদ্যোক্তা কমিটি বরগুনা জেলার সাধারণ সম্পাদক আরিফ রহমান বলেন, ‘কুয়াকাটার ঠিক কাছেই আমাদের তালতলীতে ‘শুভসন্ধ্যা’ সৈকত। একই সঙ্গে বরগুনা শহরকে ভাগ করে বয়ে চলা খাকদোন নদ, সদর উপজেলার বুড়িরচর এলাকার লীলাবতি, গোড়াপদ্মা পর্যটন কেন্দ্র, মোহনা পর্যটনকেন্দ্র, পাথরঘাটা হরিণঘাটা ইকোপার্কের অদূরে লালদিয়া, কাচিড়ার এভারগ্রিন টুলুর চর, মাঝের চরসহ বেশ কিছু সৌন্দির্যমণ্ডিত জায়গা রয়েছে। প্রতিটি জায়গাই ভ্রমণপিপাসুদের জন্য আকর্ষণীয়।
‘তবে সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এই পর্যটনকেন্দ্রগুলো আমাদের কোনো কাজে আসছে না। যাতায়তব্যবস্থা ও অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেই এখানের পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন সম্ভব। গোটা জেলার পর্যটন স্পটগুলো নিয়ে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হবে, এই বাজেটে আমাদের প্রত্যাশা এটাই।’
দেশের কৃষি ও মৎস্য খাতে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে উপকূলীয় এই জেলাটি। বরগুনাভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ডেভেলপমেনট অর্গানাইজেশন অব কোস্টাল পিপলের (ডোক্যাপ) তথ্য অনুযায়ী, এখানকার কৃষকরা বছরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার কৃষিপণ্য উৎপাদন করে। গোটা দেশের চাহিদার প্রায় ২৫ ভাগ মাছের জোগান দেয়া হয় এই জেলা থেকে।
কৃষি ও মৎস্যজীবী মানুষগুলোকে নিরাপদে বাঁচিয়ে রাখার জন্য দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষম টেকসই বাঁধ ও অবকাঠামো নির্মাণ সবার আগে প্রয়োজন বলে জানান ডোক্যাপের নির্বাহী পরিচালক মাসুদ আলম।
এ ছাড়া আবহাওয়ার সঠিক তথ্য জানার জন্য পাথরঘাটা উপজেলায় একটি আবহাওয়া স্টেশন করার দাবিও জানিয়েছেন জেলার উপকূলীয় ট্রলার মালিক সমিতির সদস্যরা।