আসন্ন বাজেটে রাজশাহীর উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ চান স্থানীয়রা। সেই সঙ্গে করোনায় ঝিমিয়ে পড়া শিল্পকারখানাগুলোকে চাঙা করার জন্য ব্যাংক ঋণ সহজ করার দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
শিল্প ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা এ অঞ্চলে কর্মসংস্থানের জন্য কৃষিভিত্তিক শিল্পবান্ধব পরিবেশ তৈরির দাবি উঠেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর মাধ্যমেও অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারে।
রাজশাহী রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান রিংকু জানালেন, করোনার কারণে দেশে নতুন করে আড়াই কোটি লোক দরিদ্রসীমার নিচে নেমে গেছে।
‘এবারের বাজেট যদি সেই মানুষগুলোর জন্য হয়, তাহলে আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি। আমাদের গত ১৪ মাসে কোনো ব্যবসাই ভালো নেই, শুধু মেডিক্যাল সেক্টর বাদে। রাজশাহীতে কোনো ভারী শিল্প নাই। এখন যে শিল্পগুলো আছে সেগুলো যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সে ধরনের বাজেট আমার চাই।’
রিংকু আক্ষেপ করে বলেন, ‘রাজশাহী একটি ব্যাকওয়ার্ড জায়গা। আসলে রাজশাহীর জন্য আলাদা কোনো বাজেট ভাবে না। অন্য জেলার যা বরাদ্দ আসে রাজশাহীতেও সেটিই আসে। রাজশাহীতে লোকজন কিছু করতে পারছে না। আমাদের একনেকে পাস হাওয়া বাজেট অন্য জেলাতে চলে গেছে। প্রণোদনার যে ঘোষণা, সেটাও রাজশাহীর লোকরা সেভাবে পায় না।’
জেলার ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী বলেন, ‘রাজশাহীতে উন্নয়নমূলক অবকাঠামো ভালোই এগোচ্ছে। কিন্তু কর্মসংস্থান উন্নয়নের যেসব অবকাঠামো দরকার, সেগুলোতে আমরা বেশি বাজেট চাচ্ছি। করোনার জন্য বাজেট বরাদ্দ বেশি রাখতে হবে। এ ছাড়া সুরক্ষাসামগ্রী ফ্রি দেয়ার জন্য বাজেট রাখতে হবে। এখানে কর্মসংস্থানের খুব অভাব। বেকারত্ব বাড়ছেই।
‘রাজশাহী বিসিকের জন্য আলাদা গ্যাস ও বিদ্যুৎতের জন্য আলাদা লাইনের ব্যবস্থা করতে হবে। যমুনা রেলসেতু দরকার। আমাদের শিল্প, কলকারখানার একটি বড় বাধা হচ্ছে চট্টগ্রাম পোর্টের সঙ্গে রাজশাহীর যোগাযোগ। আমাদের কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ আনা-নেয়া ব্যয়বহুল। এ জন্য রেলসেতুর প্রয়োজন। মালামাল আনা-নেয়ার খরচের কারণে নদীর ওপারের সঙ্গে আমরা কুলিয়ে উঠতে পারি না। এই কাজগুলো অগ্রগতির জন্য আমরা বাজেটে বরাদ্দ চাই।’
বাজেটে কৃষি খাতকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি।
তিনি বলেন, ‘রাজশাহী কৃষিপ্রধান এলাকা। এই কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে অ্যাগ্রো বেজড স্পেশাল ইকোনমিক্যাল জোন করার উদ্যোগ দরকার। এর মাধ্যমে প্রচুর কর্মসংস্থান সম্ভব। এখানকার মানুষ কর্মসংস্থানের যে সংকটে ভুগছে, তা কাটাতে হলে শিল্প গড়ে তোলার বিকল্প নেই।
‘আর এমনিতেই এখানে ভারী শিল্প নেই। যে কয়টা ছোট ছোট শিল্পকারখানা আছে, সেগুলোও নানা সীমাবদ্ধতা পার করছে। করোনায় এখানকার ব্যবসায়ীদের চরম ক্ষতি হয়েছে। তাদের সহায়তা দরকার। আমরা বাজেটে পোল্ট্রি, ডেইরির উন্নয়নের জন্য সহায়তা চাই। রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী সিল্কের জন্য বাজেট বাড়াতে হবে।’
রাজশাহীতে কৃষিভিত্তিক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার দাবি আবারও সামনে এনে মনি বলেন, ‘এটিই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’
এ ছাড়াও চামড়াশিল্প, বন্ধ টেক্সটাইলকে আধুনিকায়ন, জুট মিল, সুগার মিল এগুলোর জন্য বাজেট দরকার বলে মনে করেন তিনি।