বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্বাস্থ্য কৃষি পর্যটনে প্রয়োজন বিশেষ গুরুত্ব

  •    
  • ২ জুন, ২০২১ ২৩:১৪

বাজেটে স্বাস্থ্য, কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তা এবং পর্যটন খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া সংকটে পড়া শিল্প খাতে প্রণোদনা দেয়া, ভ্যাট-ট্যাক্সের হার কমানো, জরুরি পণ্য আমদানিতে শুল্ক হ্রাসসহ আরও কিছু প্রস্তাবের কথা জানিয়েছেন তারা।

করোনাভাইরাস মহামারিতে সংকটে দেশ। অর্থনীতি, ব্যবসা, মানুষ- সবকিছুই সংকটে। এমন সময়ে বৃহস্পতিবার ঘোষিত হবে জাতীয় বাজেট। বাজেটে সংকট থেকে উত্তরণের কী পথ দেখাবেন অর্থমন্ত্রী? সবকিছুই যখন সংকটে, তখন কোন খাতগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে বাজেটে?

বৃহস্পতিবার বাজেট ঘোষণার পরই মিলবে এসব প্রশ্নের উত্তর। এর আগে বুধবার সিলেটের বিভিন্ন সেক্টরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে তাদের বাজেট ভাবনা জানতে চেয়েছিল নিউজবাংলা।

বাজেটে স্বাস্থ্য, কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তা এবং পর্যটন খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া সংকটে পড়া শিল্প খাতে প্রণোদনা দেয়া, ভ্যাট-ট্যাক্সের হার কমানো, জরুরি পণ্য আমদানিতে শুল্ক হ্রাসসহ আরও কিছু প্রস্তাবের কথা জানিয়েছেন তারা।

স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে

স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন বলে মনে করেন সিলেট চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব।

তিনি বলেন, ‘করোনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে এ খাতের দিকে আমাদের গভীর মনোযোগ দেয়া দরকার। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজেটে ডিসপজেবল সিরিঞ্জ থেকে শুরু করে জীবন রক্ষাকারী যন্ত্রপাতি শুল্কমুক্ত আমদানির সুযোগ রাখা প্রয়োজন।’

সিলেট প্রাইভেট হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. নাসিম আহমদ বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বর্তমানে বাজেটের খুব সামান্য অংশেই স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ থাকে। এই বরাদ্দ দিয়ে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব নয়।’

কৃষিতে অগ্রাধিকার প্রয়োজন

এবারের বাজেটে কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়ে সবচেয়ে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত বলে মনে করেন বাংলাদেশ কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি আলীমুল এহছান চৌধুরী।

আলীমুল এহছান চৌধুরী বলেন, ‘গত বছর করোনা মহামারি শুরুর কয়েক মাস আগে খাদ্যঘাটতি দেখা দিয়েছিল। তখন কিন্তু আমরা টাকা দিয়েও ধান, চাল, পেঁয়াজের মতো পণ্য পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে ক্রয় করতে পারিনি। তাদের নিজেদের খাদ্যনিরাপত্তা কিংবা ঘাটতি থাকায় হয়তো রপ্তানি বন্ধ রেখেছিল। একইভাবে ২০১৯ সালে আমাদের উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদন হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো মজুতের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘দুটি বিষয় থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়ার আছে। বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে এটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া দরকার। এর পাশাপাশি কৃষক যাতে তার ন্যায্যমূল্য পায় তা নিশ্চিত করা, বাজেটে কৃষকের জন্য সার, ডিজেলের মতো অনুষঙ্গে এবং কৃষিযন্ত্রের ক্ষেত্রে ভর্তুকি বাড়ানো দরকার।’

গত তিনটি বাজেটেই কৃষি ভর্তুকির পরিমাণ এক জায়গায় আটকে আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতির কারণে হলেও ভর্তুকির পরিমাণ এবার বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি কৃষি যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমালে কৃষি যন্ত্রপাতি দেশেই কম খরচে উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এতে কৃষক এবং দেশের কৃষিই লাভবান হবে।’

বাজেটে কৃষি খাতে আলাদা গুরুত্বের প্রস্তাব রেখে সিলেট চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব বলেন, ‘করোনা আমাদের কত দিন পর্যন্ত ভোগাবে তা বলা মুশকিল। যে কারণে খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টিকে এবার সবচেয়ে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। কৃষকের পুঁজি ফেরত পাওয়ার গ্যারান্টি না থাকলে সে ফসল ফলানোর উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে।’

একই প্রস্তাব রেখে সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আফজাল রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘ধান বা শস্য যাতে নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত ফসল তুলতে কৃষককে যান্ত্রিক সহযোগিতা দেয়া যেতে পারে। যদি কোনো কারণে কৃষকের ফসল নষ্ট হয়, তাহলে তার ঋণ মওকুফ করে হলেও বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’

পর্যটনে বিশেষ বরাদ্দের দাবি

করোনায় সবচেয়ে সংকটে পড়া খাতগুলোর একটি পর্যটন। সিলেট অঞ্চলের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনায় হিসেবে বিবেচিত এই খাতটি এখন সবচেয়ে সংকটে। পর্যটন স্পট বন্ধ, হোটেল বন্ধ, রেস্টুরেন্টের ক্ষেত্রেও রয়েছে বিধিনিষেধ। ফলে বিপাকে পড়েছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা।

এ অবস্থায় দেশের পর্যটন খাতের জন্য আলাদা বরাদ্দ প্রয়োজন বলে মনে করেন সিলেট চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব।

তিনি বলেন, ‘সরকার এরই মধ্যে পর্যটন খাতের উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে আরও কিছু বিষয়ে নজর দেয়া জরুরি। যেমন দেশে রেমিট্যান্স সঠিক পথে আনার জন্য সরকার ২ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। অথচ যেসব পর্যটক দেশে আসছেন (কোম্পানি টু কোম্পানি পেমেন্টের বেলায়) তারা বিল পরিশোধ করলে ১০ শতাংশ কর কেটে নেয়া হচ্ছে। এটি থামানো প্রয়োজন। কারণ এতেও দেশে রেমিট্যান্স আসে।’

শোয়েব বলেন, ‘পর্যটন খাতের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে পর্যটনে বিনিয়োগে ১০ বছরের জন্য ট্যাক্স হলিডে ঘোষণা করা যেতে পারে।’

অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্র্যাভেল অ্যাজেন্ট অফ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার জলিল বলেন, ‘পর্যটন হলো এমন একটি খাত যার উন্নয়ন হলে সঙ্গে অন্য দশ-বারোটি ব্যবসারও উন্নতি হবে। তাই এ খাতে বাজেটে আরো গুরুত্ব দেয়া উচিত।’

তিনি বলেন, ‘সরকার বলে পর্যটন খাতে প্রণোদনা দিচ্ছে। কিন্তু ব্যাংকে গেলে আলাদা কোনো সুবিধা মিলে না। নিয়মিত ঋণের যে পদ্ধতি সেভাবেই বন্ধক দিতে হয় ঋণ নিতে হলে। তাহলে এটা প্রণোদনা হয় কীভাবে? ব্যাংকগুলো বড়জোর ব্যবসার এক-তৃতীয়াংশ ভ্যালু ধরে ঋণ দিতে পারে। এতেও অনেক উপকার হয় এই খাতের।’

করোনা মহামারিতে হিমশিম খাচ্ছে হোটেল-রিসোর্টগুলো। এ অবস্থায় সিলেট হোটেল মোটেল গেস্টহাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমাত নুরী জুয়েলের প্রস্তাব- ভ্যাটের হার কমানো ও নিবন্ধনের বাইরে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ট্যাক্স রিটার্ন প্রণোদনা দিয়ে নিবন্ধনের আওতায় আনা।

জুয়েল বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন হোটেল ব্যবসার অবস্থা খারাপ। বহু দেশ হোটেল-মোটেলের ওপর ভ্যাটের পরিমাণ কমিয়েছে। আমাদের দেশেও এই সুযোগ দেয়া উচিত।’

আগামী বাজেটে ভ্যাট ১০ থেকে ৫ শতাংশ নামিয়ে আনার দাবি জানান তিনি।

বাজেটে পর্যটন খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জহিরুল কবির চৌধুরী শীরু বলেন, ‘পর্যটন খাতের অবকাঠামো ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। এ ছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’

করোনায় সংকটে পড়া পর্যটন খাতের উদ্যোক্তাদের টিকে থাকার জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দেরও দাবি জানান তিনি।

করোনা মহামারি পরিস্থিতির কারণে ইতিমধ্যে সিলেটের ৩০ শতাংশ রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। সারা দেশেই একই অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান ও ভ্যাট সহনশীল রাখার দাবি জানান বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও সিলেট জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, ‘সিলেটের প্রায় ৪০০ রেস্টুরেন্টের মধ্যে ৩০ শতাংশ করোনার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে ১৫ শতাংশ (এসি) ও ৭ শতাংশ (নন-এসি) রেস্টুরেন্টে ভ্যাট দেয়া হয়। এটি অর্ধেকে নামিয়ে আনা প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘পর্যটকরা না আসলে সিলেটের রেস্টুরেন্ট ব্যবসা চাঙা হবে না। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়া প্রয়োজন।’

ভাবতে হবে ব্যবসায়ীদের কথাও

সিলেট উইমেন চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি স্বর্ণলতা রায় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষে প্যাকেজের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘করোনার কারণে অনেক নারী উদ্যোক্তা পুঁজি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। তাদের রক্ষায় বাজেটে বরাদ্দ রাখা দরকার।’

স্বর্ণলতা বলেন, ‘অনেক নারী উদ্যোক্তা অনলাইনে ভালো কাজ করছেন। কিন্তু ব্যবসায়ী হিসেবে তারা স্বীকৃতি পাচ্ছেন না। এসব উদ্যোক্তাদের ট্রেড লাইসেন্স, ব্যাংকঋণ ও রপ্তানি লাইসেন্সের আওতায় আনা গেলে দেশের অর্থনীতি লাভবান হবে।’

বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত রাখা ও আগামী দুই বছর তাদের করমুক্ত রাখার দাবি জানান তিনি।

সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আফজাল রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান সংকট উত্তরণের জন্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমানো, অফিশিয়াল জটিলতা কমানোর প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘ভ্যাট ট্যাক্স কমানো জরুরি। ভ্যাটের ক্যাটাগরি অনুযায়ী যতটা সম্ভব কমাতে হবে। তা না হলে জিনিসপত্রের দাম কমবে না। এসবের পাশাপাশি ব্যাংকঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার কমানো, সুদ মওকুফ করা দরকার। এ ধরনের প্রস্তাব অর্থমন্ত্রীর কাছে আমরা চেম্বার থেকেও পাঠিয়েছি।’

সিলেট চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব বলেন, ‘সিলেটে যেহেতু সেভাবে শিল্পকারখানা নেই, তাই এই অঞ্চলে শিল্পকারখানার বিকাশে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। সিলেটে বিনিয়োগে উৎসাহ জোগাতে এ জন্য দশ বছরের জন্য ট্যাক্স হলিডে ঘোষণা করা যেতে পারে।’

সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান রিপন বলেন, ‘ক্ষুদ্র ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখা না গেলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।’

তিনি বলেন, ‘সিলেটে ২৭ হাজার দোকানপাট আছে। এরই মধ্যে করোনার কারণে ৩০ শতাংশ দোকান বন্ধ হয়ে পড়েছে। অনেকে নতুন ব্যবসা শুরু করলেও ব্যাংকঋণ পাচ্ছেন না।’

এ বিভাগের আরো খবর