করোনা মহামারিকালে মানুষের জীবন বাঁচাতে এবারের বাজেটে মেগা প্রকল্পে না গিয়ে কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করে ধর্মভিত্তিক ইসলামি দলগুলো।
ইসলামি দলগুলোর কয়েকটি মনে করে, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করাই এবারের বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত আছে ১২টি ইসলামিক দল। এর মধ্যে চারটি আছে আওয়ামী লীগের মহা জোটে। পাঁচটি দল আছে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে। দুটি দল ২০ দল থেকে বেরিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে চারটি কোনো জোটে নেই।
বাজেটে শিক্ষা ও জনসম্পদ উন্নয়ন খাতে প্রধান্য চায় চরমোনাই পীরের দল ইসলামিক আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম রোববার পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে বলেন, ঋণ ও অনুদাননির্ভর বাজেট থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। শিক্ষা ও জনসম্পদ উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। বাজেটের ১৫ শতাংশের মতো অর্থ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার পেছনে ব্যয় হচ্ছে। একে যুক্তিসংগত করতে হবে। এডিপি বাস্তবায়নের হার খুবই কম। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। প্রতিরক্ষা ব্যয় কমাতে হবে।
কৃষি খাতে বিশেষ বরাদ্দ চায় জামায়াত
বাজেটে কৃষি খাতে বিশেষ গুরুত্ব চায় জামায়াতে ইসলামি। এ ছাড়া করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখার দাবি জানিয়েছে দলটি।
কেমন বাজেট চান জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা একটি গণমুখী বাজেট চাই। বাজেট যেন জীবন ও জীবিকার জন্য ভারসাম্যপূর্ণ হয়।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষা খাতে গত দুই বছরে যে ক্ষতি হলো, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উন্নয়ন ঘটাতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে পাটকলগুলো চালু করার কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু হয়নি। এ ছাড়া যারা কাজ হারিয়েছে, তাদের পুনর্বাসন করা। রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য সরকারের অনেক কিছু করণীয় আছে। প্রবাসীদের মধ্যে বহু মানুষ করোনায় আক্রান্ত। যারা চাকরি হারা হয়ে বিদেশ থেকে এসেছে, তাদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ থাকা উচিত বলে আমরা মনে করি।’
বাজেটে কোন খাতকে অগ্রাধিকার দেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষা ও কৃষি খাতকে আগ্রাধিকার দিতে চাই।’
অর্থনীতি পুনরুদ্ধার চায় জাকের পার্টি
কেমন বাজেট চান জানতে চাইলে জাকের পার্টির মহাসচিব এজাজুর রসুল নিউজবাংলাক বলেন, ‘অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করাই এবারের বাজেটের প্রধান বিষয় হওয়া উচিত। সরকারের এটার ওপরে জোর দেয়া উচিত। অর্থনীতি পুনরুদ্ধার না করতে পারলে আমরা “কিক আউট” হয়ে যাব। এখন মেগা প্রজেক্ট নেয়া ঠিক হবে না। যে প্রজেক্টগুলো এখন আছে, সেগুলোই শেষ করার দিকে সরকারের জোর দেয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কৃষি খাতে আমাদের বেশি জোর দেয়া উচিত। এটাই আমাদের বাঁচানোর উপায় হবে। স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা খুবই নাজুক। এ খাতেও নজর দেয়া উচিত।’
মানুষ বাঁচানোর বাজেট চায় তরিকত ফেডারেশন
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক তরিকত ফেডারেশন। দলটি বলছে, তারা এবারের বাজেটে মেগা প্রকল্পের সঙ্গে মানুষ যাতে বাঁচতে পারে এমন বাজেট চায়।
দলটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেগা যে প্রকল্পগুলো রয়েছে, সেগুলো চলমান থাকবে খুবই স্বাভাবিক। আমার দল মনে করে, মেগা প্রকল্প থাকুক, তবে মানুষ বাঁচানোর বাজেট হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য বাজেট হতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গ্রামকে শহর করবেন, বলেছেন। কিন্তু সেটার ক্ষেত্রে ভালো প্রকল্প নেয়া উচিত বলেই আমরা মনে করি। আমরা মনে করি যে, দেশের বৃহৎ একটি অংশ যারা দরিদ্র, তাদের জন্য বাজেট হতে হবে।’
স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতকে আগ্রাধিকার দেয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
জনবান্ধব বাজেট চায় জমিয়ত
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হেফাজতে ইসলামীর বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির দাবাহ বিষয়ক সম্পাদক নাজমুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চাই জনগণের কল্যাণকর একটি বাজেট, যা জনবান্ধব হবে। দেশের উন্নয়নে একটি ভালো বাজেট হোক এটাই আমরা চাই।’
স্বাস্থ্য খাতে মেগা প্রকল্প চায় ইসলামি ফ্রন্ট
স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে মেগা প্রকল্প চায় বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্ট। দলটির মহাসচিব এম এ মতিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বড় ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পের চেয়ে বেশি প্রয়োজন করোনা মহামারিতে স্বাস্থ্য বিভাগে বেশি গুরুত্ব দেয়া। স্বাস্থ্য বিভাগের উন্নয়নের জন্য মেগা প্রকল্প নিয়ে আসা উচিত। কারণ অবকাঠানোগত উন্নয়নের চেয়ে মানুষের জীবন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
করোনা মেকাবিলায় উদ্যোগে সরকারের ত্রুটি আছে বলে তার দল মনে করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে বলেই আমরা মনে করছি। কারণ টিকা নিয়ে এখনও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। বিশাল জনগোষ্ঠী এখনও টিকার আওতার বাইরে। শুধু লকডাউনের মাধ্যমে মানুষকে ঘরে বসিয়ে রাখার যে উদ্যোগ সরকার নিচ্ছে, তা সরকারের সঠিক কার্যক্রম বলে আমরা মনে করছি না।’
নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণ মানুষের যাতে উপকার হয়, এমন বাজেট চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই মানুষ যাতে তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারে। ঋণ খেলাপিদের যাতে মাফ না করা হয়। আমরা চাই স্বাস্থ্য খাতে যেন অগ্রাধিকার দেয়া হয়।’