করোনা মহামারিকালে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও নতুন শিল্প স্থাপন উৎসাহিত করতে আগামী বাজেটে আরও কয়েকটি খাতে কর অবকাশ সুবিধা (ট্যাক্স হলিডে) দেয়া হচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে: অর্থনীতির গতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আনা। সে জন্য নতুন বাজেটে কোনো ধরনের নতুন কর আরোপ না করে ব্যবসা-বান্ধব বাজেট দেয়া হবে, যাতে করে নতুন বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলেন, উদ্যোক্তাদের নতুন বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে আগামী বাজেটে কর অবকাশ সুবিধার আওতা আরও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: কৃষি প্রক্রিয়াজাত ফল, দুগ্ধ উৎপাদন ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত বিভিন্ন ধরনের পণ্য। এর বাইরে গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত রাইস কুকার, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন এবং ব্লেন্ডার শিল্প স্থাপনে কর অবকাশ সুবিধার দেয়ার ঘোষণা থাকছে আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে।
এনবিআর বলেছে, স্থানীয়ভাবে এসব শিল্প স্থাপন করা হলে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হবে। অর্থাৎ আগামী ১ জুলাই থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত উল্লিখিত খাতসমূহ এ সু্বিধা পাবে।
কর অবকাশ বা ট্যাক্স হলিডে মানে একটি নির্দির্ষ্ট সময় পর্যন্ত সরকারকে কোনো আয়কর না দেয়া। এর পর কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রযোজ্য হারে বার্ষিক মুনাফার উপর কর দিতে হয়। একে করপোরেট কর বলা হয়।
কর অবকাশ সুবিধাকে শিশু বয়সের সঙ্গে তুলনা করা হয়। একটি শিশু জন্মের পর নিজে হাঁটতে পারে না, বসতে পারে না। ঠিক তেমনি একটি শিল্প যখন স্থাপন করা হয়, তখন প্রারম্ভিক পর্যায়ে নানাভাবে প্রণোদনা দেয়া হয়, যাতে সেটি দাঁড়াতে পারে।
দেশের বৃহত্তর অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে এ সুবিধা দেয় সরকার।
যোগাযোগ করা হলে এনবিআরের সাবেক সদস্য আমিনুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, কর অবকাশ সুবিধা দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করে সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিকি প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, কর অবকাশ সুবিধা দিলে নতুন উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবেন। যাদের অলস টাকা পড়ে আছে, তারা নতুন করে বিনিয়োগ করবেন। এতে কর্মসংস্থান হবে।
ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে স্থানীয় শিল্পের বিকাশে কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হয়।
বাংলাদেশে প্রথম ১৯৭৪ সাল থেকে কর অবকাশ সুবিধা চালু রয়েছে। এর পর থেকে বিভিন্ন সময়ে আদেশ (এসআরও) জারি করে প্রয়োজন মোতাবেক বিভিন্ন খাতে কর অবকাশ সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার।
আগে ঢালাওভাবে কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হতো। কিন্তু এ সুবিধার ব্যাপক অপব্যবহার ফলে নীতি-সহায়তায় পরিবর্তন আনা হয়।
বর্তমানে শর্তসাপেক্ষে কিছু খাতে সম্পূর্ণ করমুক্ত সুবিধা এবং কিছু ক্ষেত্রে হ্রাসকৃত হারে (বিদ্যমান হারের চেয়ে কম) কর অবকাশ সুবিধা দেয়ার নিয়ম চালু রয়েছে।
কোন খাত কী ধরনের সুবিধা পাবে এবং কত বছরের জন্য দেয়া হবে তা এনবিআর-এর আদেশে উল্লেখ থাকে।
বর্তমানে কতগুলি খাত কর অবকাশ সুবিধা পাচ্ছে, তার সঠিক সংখ্যা এনবিআরের কাছে নেই। তবে ধারণা করা হয়, বিদুৎ, জ্বালানি, ভৌত অবকাঠামোসহ শতাধিক খাত কর অবকাশ সুবিধা ভোগ করছে।
কর অবকাশ ছাড়াও কর হ্রাস, কর ছাড়সহ বিভিন্নভাবে শিল্পখাতে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। এসব সুবিধা দেয়ার ফলে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে।
কী পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই এনবিআর-এর কাছে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ২০১১ সালে এ বিষয়ে একটি জরিপ করেছিল। তাতে দেখা যায়, কর সুবিধায় ওই বছর কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছিল।
আইএমএফ মনে করে, বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে এদেশে কর সুবিধা বেশি দেয়া হয়।
কর সুবিধার বড় একটি অংশ অপচয় হয় বলে মনে করে আন্তর্জাতিক এই ঋণদানকারী সংস্থাটি। সে জন্য কৃষিসহ বেশির ভাগ খাতে কর সুবিধা বাতিলের পক্ষে সুপারিশ করে আইএমএফ, যদিও সরকার তা গ্রহণ করেনি।