বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মন্দঋণ আদায়ে ‘আলাদা কোম্পানি’ গঠন জরুরি

  • এটিএম তাহমিদুজ্জামান   
  • ২৯ মে, ২০২১ ১৪:৫৭

অর্থবছরের শেষ মাসে এসে সংশ্লিষ্ট সবাই হিসাব-নিকাশ করতে থাকে কতটা অর্জন হলো, তার প্রভাব কোথায় কোথায় পড়েছে, বাকিটা কেন অর্জন হয়নি, কী হলে কী হতে পারতর মতো নানা আলোচনা। তীব্র বিতর্ক চলে জিডিপি নিয়ে। সরকার পক্ষের দাবি এক রকম, আন্তর্জাতিক মুরব্বিরা দাবি করে অন্যরকম। অর্থনীতির দেশীয় পণ্ডিতদেরও থাকে ভিন্ন ভিন্ন মত।

মে মাসের শেষ প্রান্তে আমরা পৌঁছে গিয়েছি। আর কয়েক দিন পরই শুরু হবে জুন। অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশে জুন মাসের গুরুত্ব অপরিসীম।

অর্থবছরের শেষ মাসে এসে সংশ্লিষ্ট সবাই হিসাব-নিকাশ করতে থাকে কতটা অর্জন হলো, তার প্রভাব কোথায় কোথায় পড়েছে, বাকিটা কেন অর্জন হয়নি, কী হলে কী হতে পারতর মতো নানা আলোচনা।

তীব্র বিতর্ক চলে জিডিপি নিয়ে। সরকার পক্ষের দাবি এক রকম, আন্তর্জাতিক মুরব্বিরা দাবি করে অন্যরকম। অর্থনীতির দেশীয় পণ্ডিতদেরও থাকে ভিন্ন ভিন্ন মত।

সাধারণত জুনের প্রথম সপ্তাহে বাজেট ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বেগবান হয় এই বিশ্লেষণের ধারা। দেশের সচেতন জনগোষ্ঠীর প্রায় সকলেই যুক্ত হয় বাজেট আলোচনায়।

বলার অপেক্ষা রাখে না আমাদের দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় যুক্ত প্রতিষ্ঠানের মুখ্য ভূমিকা দৃশ্যমান। ব্যাংক এবং ব্যাংকাররা আন্দোলিত হয় বাজেটকেন্দ্রিক উত্তপ্ত আলোচনায়। এ যেন তাদেরই আলোচনার মৌসুম।

পেশাগত কারণেই এমন অনেক আলোচনা আর আড্ডাতে নীরব দর্শক হিসেবে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়।

সেদিন এমন এক আলোচনা অসমাপ্ত রেখেই বাড়ি ফিরি ঘড়ির কাটার হুংকারে। কিন্তু আলোচনার রেশ আটকে থাকে মাথার ভিতরে।

ভাবছিলাম এবারের বাজেটে কী থাকতে পারে ব্যাংকিং কাঠামো সুদৃঢ় করতে। প্রথমেই ভাবনায় এলো ব্যাংক কোম্পানির মূলধনের বিষয়টি।

ব্যাংকের মূলধনের সাথে নির্ভর করে এর সকল কার্যকলাপ। তাই সকল আলোচনাতেই ব্যাংক সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি পণ্ডিতগণ মূলধন ভিত্তির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

মূলধন বৃদ্ধির একটি অন্যতম কৌশল হচ্ছে বোনাস শেয়ার অর্থাৎ স্টক লভ্যাংশের মাধ্যমে পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি।

আর এ প্রক্রিয়াকে বেগবান করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নীতিমালা। ফলে বিগত এক দশকে দেশে সক্রিয় প্রায় প্রতিটি ব্যাংকেরই মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে জ্যামিতিক হারে।

ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার আন্তর্জাতিক গাইডলাইন ব্যাসেলের সূচক মেনেই ব্যাংকগুলো দেশের ক্রমবর্ধমান ব্যবসায়িক কর্মযজ্ঞের সহযাত্রী হতে পেরেছিল তাদের পর্যাপ্ত মূলধনের কারণে।

কিন্তু নতুন পরিস্থিতি হাজির হয় স্টক ডিভিডেন্ড নিরুৎসাহিত করে নগদ লভ্যাংশ প্রদানের বিধান প্রণয়নের কারণে।

নগদ লভ্যাংশকে প্রণোদিত করায় সকল ব্যাংক থেকেই নগদ লভ্যাংশ আকারে ক্যাশ আউট হয়ে যাচ্ছে, যা আগে যুক্ত হত মূলধনের সাথে।

ফলে ব্যাংকসমূহের মূলধন ঘাটতির সংকট তৈরি হচ্ছে। সুতরাং সার্বিক পরিস্থিতি এবং ব্যাংক খাতের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্টক লভ্যাংশ প্রদানের দিকে আগ্রহী করার বিধান ফিরিয়ে আনাটা অতীব জরুরি বলে আমি মনে করি।

অন্যদিকে আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় এখন সবচেয়ে বড় সমস্যার নাম হলো মন্দঋণ। করোনা মহামারির কারণে মন্দঋণের পরিমাণ বেড়ে যাবে জ্যামিতিক হারে।

আপাতত ঠেকা দিয়ে রাখা হয়েছে মহামারিকে মোকাবিলা করার জন্য। এই মন্দঋণের ব্যবস্থাপনা নিয়েও গভীরভাবে ভাবার বিকল্প নেই।

পৃথিবীব্যাপী মন্দঋণ ব্যবস্থাপনায় মন্দ ব্যাংক (ব্যাড ব্যাংক) থিওরি বেশ গ্রহণযোগ্য মতবাদ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

মন্দ ব্যাংক শুনতে কানে ঠেকতে পারে। সে বিবেচনায় অনেকে এটাকে সম্পদ পুনর্গঠন কোম্পানি হিসেবেও অভিহিত করে।

এ প্রতিষ্ঠানটি মূলত মন্দঋণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করে। ব্যাংকের ভালো ঋণগুলো মন্দঋণ থেকে আলাদা করা হয়।

এই মন্দঋণ ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান গঠন করার রোডম্যাপ বাজেটে থাকাটা হবে একটা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।

ব্যাংকিং খাতে আরেকটি উল্লেখযোগ্য আলোচনার বিষয় হলো আয়কর ব্যবস্থাপনা। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানসমূহের হিসাব বিবরণী ও ট্যাক্স ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাপক অথচ সূক্ষ্ম নজরদারিতে একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হয়।

সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনার কারণে ব্যাংকসমূহের মধ্যে আয়কর ফাঁকির গল্প তৈরি হয়নি। তথাপিও ব্যাংকিং খাতে এক ধরনের অতিরিক্ত আয়করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।

ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় মন্দঋণের বিপরীতে অপারেটিং মুনাফা থেকে নির্দিষ্ট হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করে নিট মুনাফা হিসাব করা হয়।

আর এই নিট মুনাফা থেকেই বিতরণ করা হয় লভ্যাংশ। অপারেটিং মুনাফার সিংহভাগ প্রভিশন হিসাবে সংরক্ষিত থাকে।

ফলে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য বণ্টিত সত্যিকারের নিট মুনাফা হয় অনেক কম, যা প্রভিশন আকারে সংরক্ষিত থাকে তাকে মুনাফা হিসাবে বিবেচনা না করাই যৌক্তিক।

আর সে যৌক্তিকতা বিবেচনায় নিয়ে বাজেটে ব্যাংকিং খাতের জন্য নিট মুনাফার ওপর আয়কর নির্ধারণের যৌক্তিক দাবিটি বিবেচিত হলে দীর্ঘদিনের একটি দাবি পূরণ হবে।

করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানসমূহ কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী অনেক কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে।

কিন্তু আয়কর নীতিমালার জটিল সমীকরণে সেগুলোর অনেকটাই সিএসআর হিসেবে পরিগণিত হয় না, যার ফলে ব্যাংকগুলোতে সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনায় কখনো কখনো এক ধরনের হতাশার জন্ম দেয়।

এবারের বাজেটে এ বিষয়টি সুরাহা হলে ব্যাংকগুলো সিএসআর কার্যক্রমে আরও উৎসাহিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।

ট্রেজারি বন্ড বিনিময় ব্যবস্থাপনা ব্যাংকিং কার্যক্রমের একটি উল্লেখযোগ্য পণ্য। সেকেন্ডারি বাজারে এটি বিনিময়যোগ্য পণ্য হলেও বাস্তবে এটি বিনিময়ের কোনো উদাহরণ নেই।

মূলত এ পণ্যটি দেশের করপোরেট বডিগুলোকে আকর্ষণ করতে পারেনি। ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগে ব্যক্তিশ্রেণির আয়কর প্রদানকারীরা রেয়াত পেলেও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কোনো প্রণোদনা নেই।

বাজেটে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগবান্ধব দিকনির্দেশনা থাকলে ট্রেজারি বন্ড পণ্যটা আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। ফলে গুণগত পরিবর্তন আসবে ব্যাংকিং খাতসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে।

এমনিভাবে আমার মতো হাজারো পেশার কোটি মানুষের অগণিত আশার বিপরীতে বাজেট ঘোষিত হবে আর কয়েক দিন পর। দেখা যাক কতটা প্রতিফলিত হয় মানুষের চাওয়া।

এটিএম তাহমিদুজ্জামান: উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবদুর রহিম হারমাছি

এ বিভাগের আরো খবর