বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শেয়ারে লভ্যাংশে আরও কর ছাড় দেয়া উচিত

  •    
  • ২৭ মে, ২০২১ ২৩:০০

পুঁজিবাজারে লভ্যাংশের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত সীমা থাকায় অনেকেই শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেন। কিন্ত এই সীমা যদি বাড়ানো হয়, তখন বাজারে বড় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রি করার প্রবণতা কমে আসবে।

বাজেটে পুঁজিবাজার নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা উচিত। বিগত সময়ও তাই ছিল। তবে বতর্মান পুঁজিবাজারে পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে এ খাতের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া জরুরি।

পুঁজিবাজারে দুই ধরনের বিনিয়োগকারী আছে। প্রাতিষ্ঠানিক এবং ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারী। এখানে কোনো পক্ষকেই আলাদাভাবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। বরং বাজেটে দুই শ্রেণির বিনিয়োগকারীর জন্যই সমান সুযোগ সুবিধা রাখা উচিত। বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাই তুলনামূলক বেশি সুবিধা ভোগ করছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে কোনো কোম্পানি নগদ লভ্যাংশ এবং বোনাস একসঙ্গে সমপরিমাণ ঘোষণা করলে লভ্যাংশের উপর কর দিতে হয় না।

তবে কোম্পানি শুধু বোনাস দিলে অথবা নগদের চেয়ে বেশি বোনাস দিলে আইন অনুযায়ী ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়।

এই অবস্থায়, করের চাপ কমাতে কোম্পানিগুলোর এখন বোনাসের পাশাপাশি নগদ দেয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এর ফলে বিনিয়োগকারিরা এখন বেশি হারে নগদ লভ্যাংশ পাচ্ছে।

আইন অনুযায়ী, বর্তমানে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ করমুক্ত। বিদ্যমান নিয়মের কারণে কোম্পানিগুলো নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ বাড়িয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের সুবিধাও বেশি পাচ্ছে।

লভ্যাংশের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত সীমা থাকায় অনেকেই শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেন।

কিন্ত এই সীমা যদি বাড়ানো হয়, তখন বাজারে বড় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রি করার প্রবণতা কমে আসবে।

লভ্যাংশের করমুক্ত সীমা কমপক্ষে ১ লাখ টাকা কর উচিত। এই নিয়ম চালু করলে সাধারণ বিনিয়োগকারিরা উপকৃত হবেন।

ব্যক্তিশ্রেণির পাশাপাশি পুঁজিবাজারে ব্যাংক আছে, নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি আছে। ব্যাংকগুলো প্রণোদনা পেয়ে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে।

বর্তমানে ব্যাংকগুলোর পরিশোধিত মূলধনের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা আছে।

এখন যদি বলা হয়, ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ না করলে প্রণোদনা পাওয়া যাবে না, তখন ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়ে পুঁজিবাজারে তাদের বিনিয়োগ আরও বাড়াবে।

পুঁজিবাজারে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগ আসে মূলত তাদের সঞ্চয় থেকে। পুঁজিবাজারে তাদের বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয় সীমা আরও বাড়ানো উচিত।

বর্তমানে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত আয় সীমা বিবেচনা করা হয়। এ ক্ষেত্রে আরও কর ছাড় দিলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উপর করের চাপ কমবে। বাড়বে সঞ্চয়। যার সুফল পাবে পুরো অর্থনীতিসহ পুঁজিবাজার।

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকার হাউজ এবং অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি তাদের এখনও মুনাফার উপর ৪২ শতাংশের বেশি করপোরেট কর প্রদান করতে হয়।

এই কর হার অত্যন্ত বেশি, যা পুজিবাজার উন্নয়নে বাধা হিসেবে কাজ করে। এ খাতে করহার কমানো উচিত।

দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেনের বিপরীতে কমিশনের উপর যে কর আদায় করা হয়, তা বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় বেশি। পুঁজিবাজারের লেনদেন ইতোমধ্যে আড়াই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

যেভাবে পুঁজিবাজারের উত্থান হচ্ছে, তাতে লেনদেন আরও বাড়বে। বর্তমানে লেনদেনের বিপরীতে উৎসে কর শূন্য দশমিক ০৫ শতাংশ। এই হার অত্যন্ত বেশি। এটা কমাতে হবে।

পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানি আসছে না। এটা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা চলছে। কেন আসছে না সেটিই এখন আলোচনার বিষয়। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করপোরেট কর হারের পার্থক্য বাড়ানো হলেই সেটির সহজ সমাধান হবে। এ বিষয়ে আগামী বাজেটে সুষ্পষ্ট নির্দেশনা থাকা উচিত।

বাংলাদেশে বর্তমানে পুঁজিবাজারের যে বাজার মূলধন সেটি কম। এটি এখন প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা। ভারতের কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্টিজের যে পরিমাণ মূলধন, তার চেয়েও বাংলাদেশের পুজিবাজারের মূলধন কম।

এর অর্থ হচ্ছে, আমাদের পুঁজিবাজারে বড় মূলধনের কোনো কোম্পানি নেই। সম্প্রতি বেশ কিছু কোম্পানি এসেছে। তার মধ্যে ওয়ালটন, রবি অন্যতম। এ ধরনের কোম্পানির সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে।

এক সময়ে দেশের বাজারে ইউনিলিভারের পণ্যের কোনো প্রতিযোগী ছিল না। কিন্ত এখন অনেক প্রতিযোগী আছে। যারা দেশের বাজার দখল করে পুঁজিবাজারেও তালিকাভুক্ত হয়েছে।

ইউনিলিভারের মতো বড় কোম্পানিগুলোকে দেশের বাজারে ব্যবসা করে টাকা নিয়ে যাওয়ার সুযোগ বাজেটের মাধ্যমে বন্ধ করা উচিত।

দেবব্রত সরকার, ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক গবেষণা কর্মকর্তা ও বিশ্লেষক।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন সুমন

এ বিভাগের আরো খবর