বিশ্বে তামাক ব্যবহারে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সহজলভ্য ও তুলনামূলক কম দামের কারণে দেশের তরুণ ও যুব সমাজ ভয়াবহভাবে তামাকের দিকে ঝুঁকছে। তাই বাজেটে তামাকে উচ্চহারে করারোপ করে তা মানুষের নাগালের বাইরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
‘আসন্ন জাতীয় বাজেট ২০২১-২২-এ তামাকে কর বৃদ্ধির মাধ্যমে যুব সমাজকে তামাক সেবনে নিরুৎসাহিত করা’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে এ পরামর্শ দেয়া হয়।
বৃহস্পতিবার ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম-ডিজেএফবি ও ডরপ’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই ভার্চুয়াল সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল।
ডিজেএফবি সভাপতি হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে সংলাপে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড.শামসুল আলম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডরপ-এর চেয়ারম্যান আজহার আলী তালুকদার।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন প্রজ্ঞার টোব্যাকো কন্ট্রোল প্রোগ্রামের প্রধান হাসান শাহরিয়ার। প্রবন্ধে তিনি বলেন, তামাক কোম্পানির প্রধান টার্গেট তরুণ সমাজ। দেশের চার কোটি মানুষ তামাক পণ্য ব্যবহার করে। বাজারে ৪ থেকে ১৪ টাকায় সিগারেট পাওয়া যায়। মানুষ কম দামের সিগারেটে ঝুঁকছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে তামাকপণ্যের দাম কম। মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়লেও বাড়েনি সিগারেটের দাম।
তিনি বলেন, সরকারের ২০৪০ সালে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণ করতে হলে প্রতি বছর দেড় শতাংশ হারে তামাকের ব্যবহার কমাতে হবে। এ জন্য বাজেটে তামাকের কর বাড়াতে হবে।
‘সিগারেটে কমপক্ষে ৬৫ শতাংশ এবং বিড়িতে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক ট্যাক্স আরোপ করলে তামাকের দাম অনেক বাড়বে, ব্যবহার কমে যাবে। এতে কমপক্ষে ১১ লাখ ধুমপায়ী ধুমপান ছেড়ে দিবে।
তামাকের অর্থিক ক্ষতি সম্পর্কি তিনি বলেন, তামাকখাতে বছরে ২২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পায় সরকার। কিন্তু তামাক ব্যবহারের জন্য স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। তার মানে তামাক প্রতি বছর দেশের ৮ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি করে যাচ্ছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুব ও ক্রিড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, আশপাশের অনেক দেশের তুলনায় আমাদের দেশে তামাকের কর অনেক কম। তাই আসন্ন বাজেটে করের হার আরও বাড়াতে হবে। আবার খুচরা বিক্রি বন্ধ করতে হবে। তা হলে অনেকে দামের কারণে একসঙ্গে প্যাকেট সিগারেট কিনতে পারবে না।
বিশেষ অতিথি হিসেবে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড.শামসুল আলম বলেন, তামাক শূন্য দেশ নেই এর মানে এই নয় যে আমরা তামাকশূন্য হবো না। শুধু তামাক নয় সব ধরনের নেশা পণ্য বর্জন করতে হবে।
অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, তামাকে খুব একটা বেশি ট্যাক্স বৃদ্ধি হচ্ছে বলে মনে হয় না। তামাকে ট্যাক্স বৃদ্ধির মাধ্যমে যুবসমাজকে তামাকমুক্ত করা সম্ভব।
ডিজেএফবি’র কার্য নির্বাহী সদস্য সুশান্ত সিনহা সঞ্চালনায় সংলাপে অংশ নেন সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন, ডরপ-এর চেয়ারম্যান আজহার আলী তালুকদার, ডিজেএফবি’র সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান, সহ-সভাপতি হামিদুজ্জামান মামুনসহ আরও অনেকে।