বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঘাটতি অর্থায়ন, কমছে ব্যাংকঋণের লক্ষ্য

  •    
  • ২৭ মে, ২০২১ ০৮:৩২

অর্থ বিভাগের কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল বৈঠকে আগামী অর্থবছরে ব্যাংকঋণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ৯৩ হাজার কোটি টাকা। তবে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে ঋণের লক্ষ্য চিন্তা করা হচ্ছে ৭৬ হাজার কোটি টাকা।

জন-আকাঙ্ক্ষার নেই কোনো সীমা পরিসীমা। তাই প্রতিবছর বড় হচ্ছে বাজেট। তবে ব্যয় বাড়লেও সেই তালে বাড়ছে না আয়। ফলাফল বড় হচ্ছে ঘাটতির অঙ্ক। আর সেজন্য বাড়ছে ব্যাংকনির্ভরতা। ঘাটতি অর্থায়নে বড় নির্ভরতার জায়গা ব্যাংকব্যবস্থা।

তবে আগামী অর্থবছরে ঘাটতির অঙ্ক মেলাতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে অর্থ বিভাগ। এক পক্ষ চায় ব্যাংকব্যবস্থা থেকে বাড়ানো হোক ঋণের লক্ষ্য। অন্যদিকে বিদেশি ঋণনির্ভরতা বাড়ানোর পক্ষে অন্য পক্ষ। কারণ, অর্থ বিভাগের কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল বৈঠকে আগামী অর্থবছরে ব্যাংকঋণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ৯৩ হাজার কোটি টাকা। তবে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে ঋণের লক্ষ্য চিন্তা করা হচ্ছে ৭৬ হাজার কোটি টাকা।

আর সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সংগ্রহ করা হবে ৩২ হাজার কোটি টাকা, যা ঘাটতি অর্থায়ন নিশ্চিত করবে।

তবে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হতে পারে সাড়ে ৯৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় এই হার ৩৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি। ঋণ ও সহায়তা মিলিয়ে এই উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা।

করোনাভাইরাস মহামারির এই সময়ে বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ বেড়েছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ব্যাংক থেকে এ মূহূর্তে সরকারের ঋণ নিতে তেমন কোনো সমস্যা নেই। কারণ, এবার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে বড় রকমের ঘাটতি আছে। ফলে সরকারের তেমন ঋণ প্রয়োজন হয়নি। ঋণের ক্ষেত্রে দেখা গেছে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে বেশি ঋণ নিচ্ছে। অভ্যন্তরীণ ঋণের ক্ষেত্রে সরকারকে সঞ্চয়পত্রনির্ভরতা কমাতে হবে। না হলে সুদ ব্যয় বাড়বে।

বাজেট ঘাটতি

আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে আসছে সবচেয়ে বড় ঘাটতির বাজেট। জিডিপির তুলনায় ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ৬ দশমিক ১ শতাংশের মতো। ৬ লাখ কোটি টাকার বাজেটে ঘাটতি দাঁড়াতে পারে ২ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা।

ব্যাংক খাত থেকে কত ঋণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছে, পরিশোধ করেছে তার চেয়ে বেশি। ফলে সরকারের নিট ঋণ গ্রহণ ঋণাত্মক হয়ে গেছে।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। তবে নিট হিসেবে দেখা যাচ্ছে, এপ্রিল পর্যন্ত সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে উল্টো ১৩ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।

ভরসা ছিল ব্যাংকঋণ

২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭২ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। তার আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যাংকঋণের পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঋণ নেয়া হয় ২৮ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ঋণ নেয়নি সরকার।

তবে তার আগের অর্থবছরে ঋণ নেয়া হয় ৫১৪ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ঋণ নেয়া হয় ১৮ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ঋণ নেয়া হয় ২৭ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে ঋণের পরিমাণ ছিল ২৭ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে ঋণ দাঁড়ায় ২৫ হাজার ২১০ কোটি টাকা।

তার আগের অর্থবছর ২০০৯-১০ ব্যাংক খাত থেকে সরকার কোনো ঋণ নেয়নি।

এ নিয়ে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগ না থাকায় বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কম। ফলে ব্যাংকগুলোও পর্যাপ্ত ঋণ বিতরণ করতে পারছে না। এ সময় সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে ব্যাংকগুলো অন্তত নিশ্চিত সুদ পাবে।

ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বর্তমানে ব্যাংকে প্রচুর তারল্য আছে। তবে আগামীতে ব্যাংকগুলোর অবস্থা কেমন হবে সেটা এখনই বলা মুশকিল। কারণ রাজস্ব আদায় তলানিতে। সামনে আদায় খুব বেশি হবে না। ফলে সরকারের ব্যাংক নির্ভরতা বাড়বে।

সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা মহামারিতে মানুষের আয় কমে গেছে। তা ছাড়া মুনাফার ওপর করের হার বৃদ্ধি এবং নানা ধরনের কড়াকড়ি আরোপের পরও সঞ্চয়পত্র বিক্রি ঠেকাতে পারছে না সরকার।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত) ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি ১৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই ৯ মাসে এত টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়নি। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৫২ হাজার ৯৬৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা শোধ করা হয়েছে।

এ হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ২০ কোটি টাকা।

২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৭ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই খাত থেকে ঋণ নেয়া হয় মাত্র ১১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয় ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে ঋণ নেয়া হয় ৪৯ হাজার কোটি টাকা।

এর আগে কয়েক বছর ধরেই সঞ্চয়পত্র খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ঋণ নিচ্ছে সরকার।

এ বিভাগের আরো খবর