কিউবার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো তার দেশের বাজেটের উল্লেখযোগ্য অংশ বরাদ্দ দিতেন স্বাস্থ্য খাতে। দেশটির সরকার সব সময়ই স্বাস্থ্য খাতকে প্রাধান্য দেয়।
তার প্রমাণ, এবার করোনায় কিউবাতে কেউ আক্রান্ত হয়নি। বরং আমেরিকার লোকজন তাদের স্বাস্থ্য-শিক্ষা পরীক্ষার জন্য কিউবা আসে। কিউবার অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার রয়েছে।
শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ সরকারের জন্য লাভজনক। এ দুই খাতে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বাড়ালে একদিকে জনগণকে শিক্ষিত করা যায়। পাশাপাশি সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সম্ভব।
করোনা মহামারির সময়ে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট আরও বাড়াতে হবে। শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই হবে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর যদি অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার না করতে পারে, তাহলে বরাদ্দ বাড়ালেও কাজ হবে না।
আবার যদি বাজেটে অর্থ দুর্নীতি হয়, তাহলে অর্থ বরাদ্দ দিলেও তেমন লাভ হবে না। কারণ, অর্থ বরাদ্দ বেশি হলে, তা দুনীর্তিবাজদের পকেটে চলে যাবে। করোনা অতিমারির সময়ে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থ যথাযথ জায়গায় কাজে লাগছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করতে হবে।
স্বাস্থ্য খাতের কোথায় কী প্রয়োজন তার সঠিক পরিকল্পনা দরকার। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পরিকল্পনা করে ব্যবহার করতে হবে। তাহলে স্বাস্থ্য খাতের চেহারা পাল্টে যাবে৷
এর সঙ্গে জনবল বাড়াতে হবে৷ হাসপাতালগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও বিপুলসংখ্যক জনবল নিয়োগ করে জনগণের যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।
বাজেট কম হওয়ায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের চিত্র রুগ্ণ, এটা যেমন সত্য, তেমনি বাজেটের অধিকাংশ বরাদ্দ দুর্নীতির কারণে স্বাস্থ্য সেবায় কাজে আসেনি৷
জোর দিতে হবে শিক্ষা ও গবেষণায়৷ গবেষণা খাতে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা। গত বাজেটে প্রধানমন্ত্রী এই খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিলেন। তার ব্যবহার দেখা যায়নি এখনও।
গবেষণার টাকা যথাযথ ব্যবহারে নজর এবং দ্রুততম সময়ে ছাড় করতে হবে। কারণ, করোনা একটা উদীয়মান রোগ। বিভিন্ন সময়ে এ রকম রোগ বিভিন্ন রুপে দেশে আর্বিভূত হতে থাকবে। এজন্য এসব বিষয়ে গবেষণা অবশ্যই প্রয়োজন।
আমরা যদি টিকা উৎপাদন করতে পারতাম এবং আমাদের সে ধরনের সক্ষমতা থাকত, তাহলে টিকা নিয়ে এ অবস্থা হতো না। বিভিন্ন দেশ আমাদের জিম্মি করতে পারত না। টিকা ক্রয়ে বাজেটে আলাদা বরাদ্দ দিতে হবে।
স্বাস্থ্যে বাজেট বৃদ্ধি না করলে এ খাতের উন্নয়ন শুধু কল্পনায় থেকে যাবে। বাজেট বৃদ্ধি করে জনবল বাড়িয়ে কঠোর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন করতে হবে।
আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্টির জায়গাও আছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নতিতে সারা পৃথিবী ঈর্ষাও করছে। কারণ, আমরা টিবি ও এইচআইভি নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছি।
ধনুষ্টংকার, হাম—এগুলো আর আগের মতো হয় না। খুব কম মানুষ এসব রোগে আক্রান্ত হয়। পোলিও নির্মূল হয়েছে। ম্যালেরিয়া প্রায় নির্মূলের পথে।
বর্তমানে প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোঁড়ায় পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা চলছে। কমিউনিটি ক্লিনিক আজ বিশ্বের রোল মডেল। প্রাইমারি হেলথ কেয়ার আর ইপিআই বিশ্বের নজরকাড়া সাফল্য পেয়েছে।
এজন্য স্বাস্থ্য খাতে জনগণের আস্থা মজবুত করতে অন্য যেকোনো খাতের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে। করোনা সামনে রেখে পুরো স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত এ খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে। এ জন্য পরিকল্পনা করতে হবে।
লেখক: অধ্যাপক ডা. মো. এহতেশামুল হক চৌধুরী, মহাসচিব বিএমএ
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মৌসুমী ইসলাম