বাজেটের লক্ষ্য হওয়া উচিত সামগ্রিকভাবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। অর্থনীতির সকল খাতে ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নে বেশি জোর দিতে হবে। পাশাপাশি করোনাকালীন যে সকল সমস্যা প্রকট আকার ধারন করেছে, সেসব সমস্যা নিরসনে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।
করোনাকালীন সংকট মোকাবিলায় দরিদ্র জনগণের সুরক্ষায় আসন্ন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টণীর আওতা আরও বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মনোযোগ দেয়া দরকার।
করোনায় অনেক শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। অনেকেরেই আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছেন। শিক্ষক-কর্মচারীদের সুরক্ষায় আগামী বাজেটে প্রণোদনা দিতে হবে।
প্রান্তিক ও দরিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো অত্যাবশ্যক। একই সঙ্গে নিম্ম আয়ের মানুষের জন্য কম দামে পণ্যসামগ্রী বিতরণের ব্যবস্থা করা উচিত। এ জন্য সরকারি বিপণনকারী সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কার্যক্রম বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য স্থিতিশীল রাখতে তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি।
স্বাস্থ্যখাতের ঘাটতি ও দুর্বলতাগুলো যথাযথভাবে নিরুপণে একটি কার্যকর ‘স্বাস্থ্য কমিশন’ গঠন করা যেতে পারে।
বাংলাদেশে করোনা নিয়ে যে সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গবেষণায় নিয়োজিত, তাদের জন্যে পর্যাপ্ত আর্থিক ও নীতি সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সুনির্দিষ্ট কৌশলপত্র প্রণয়ন জরুরি।
করোনায় শিক্ষাব্যবস্থা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও মনস্তাত্ত্বিক ক্ষতির পরিমাণ অপরিমেয়। গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এ সময় অগণিত শিক্ষার্থী পড়াশোনার বাইরে রয়েছে।
অনেকে জীবন ও জীবিকার তাগিদে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে শিশুশ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তায় নিপতিত। এ সংকট থেকে উত্তরণে স্বল্প মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের বিকল্প নেই। নতুবা শিক্ষা ব্যবস্থায় ক্ষতিকর প্রভাব কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না।
বাজেটে শিক্ষা খাতে আরও বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। কমপক্ষে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তির আওতায় আনতে হবে। উপবৃত্তির মাথাপিছু বরাদ্দের পরিমাণও বাড়াতে হবে।
শিক্ষক-কর্মচারিদের আপৎকালীন আর্থিক প্রণোদনার পরিমাণ বাড়াতে হবে। দুর্বল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিজ্ঞানাগার ও কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনে সরকারি সহায়তা প্রদান করতে হবে।
অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বেশি সুবিধা দেয়া অত্যাবশক। এ জন্য বাজেটে এ খাতে প্রণোদনা প্যাকেজের পরিসর বৃদ্ধি এবং তা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের কৌশল প্রণয়ন করতে হবে।
বিশেষ করে গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় কুটির শিল্প ও অতিক্ষুদ্র শিল্পের জন্যে দ্রুত ও কার্যকর আর্থিক এবং নীতি সহায়তা দেয়া উচিত।
নতুন ও বিকাশমান শিল্পের ক্ষেত্রে কর অবকাশ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে নতুন উদ্যোক্তাদেরকে পাঁচ বৎসর পর্যন্ত করের আওতামুক্ত রাখা এবং ব্যক্তিশ্রেণি করে আরও ছাড় দিতে হবে।
স্বাস্থ্যখাতের সামগ্রিক উন্নয়নকল্পে বরাদ্দ বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘আগামী বাজেট নিবেদিত থাকবে এ দেশের দরিদ্র মানুষের জন্যে। আমরা মানুষের জীবন-জীবিকার জন্যে বাজেটে জায়গা করে দিব।’ তার কথার সূত্র ধরে বলা যায়, সবার আগে মানুষকে বাঁচাতে হবে; তারপরেই বিবেচনায় আসবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, প্রাক্তন অধ্যক্ষ সরকারি শহিদ আসাদ কলেজ ও নরসিংদী সরকারি মহিলা কলেজ।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, সাখাওয়াত হোসেন সুমন