বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শেখ হাসিনা সেতু

  •    
  • ১২ ডিসেম্বর, ২০২০ ০১:৫১

নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি যার হাতে, এই পদ্মা সেতুর ভিত্তির প্রস্তরটিও স্থাপন করেছিলেন সেই শেখ হাসিনাই। এর আগে আমাদের সেতুটির স্বপ্নও দেখিয়েছিলেন তিনি। আর এখন দেখিয়ে দিলেন এটিকে বাস্তবায়ন করে। ঠিক যেমনটি তিনি করেছেন আজকের বাংলাদেশের বেলাতেও। শেখ হাসিনার বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পদ্মা সেতুর নামকরণ তাই ‘শেখ হাসিনা সেতু’ ভিন্ন অন্য কিছু হতে পারে কি?

এক

গুস্তাভ আইফেল ছিলেন ফরাসি প্রকৌশলী। গত শতাব্দীর শুরুর দিকে প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওয়ার্ল্ড এক্সপো। বিশাল এ বাণিজ্যযজ্ঞকে চিরস্মরণীয় করে রাখায় ফরাসি সরকারের পরিকল্পনা ছিল এমন একটি স্থাপত্য তৈরি করা, যা একদিন আধুনিক ফান্সের প্রতীক হয়ে দাঁড়াবে। রাজধানী প্যারিসের বুকে তৈরি করা হয়েছিল বিশাল একটি টাওয়ার, যাকে কেন্দ্র করে বসেছিল ওয়ার্ল্ড এক্সপোটি।

এরপর কালে-কালে অনেক জলই প্রবাহিত হয়েছে সিন নদীতে। প্যারিসের সেই এক্সপোটির কথা ভুলে গেছে সবাই। রয়ে গেছে সেই টাওয়ারটি, যা আজ ফ্রান্সের নামের সঙ্গে সমার্থক। আর সঙ্গে সঙ্গে অমরত্বের মাপ কাঠিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন গুস্তাভ আইফেল। কারণ আইফেল টাওয়ারটির নামকরণ করা হয়েছিল এর স্থপতির নামেই।

দুই

১৯৪৭ সাল। রক্তের স্রোতে বিভক্ত ভারতবর্ষ। সাস্প্রদায়িক সম্প্রীতির দীর্ঘ ঐতিহ্যে কালি মেখে ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত হলো ভারত জিন্নাহ আর ব্রিটিশদের যৌথ ডকট্রিনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বাস্তবতায় ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশের যবনিকাপাত যে সময়ের ব্যাপার মাত্র এই অনিবার্য বাস্তবতা মেনে নিয়েই ব্রিটিশদের লক্ষ্য ছিল স্বাধীন ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের প্রভাব বজায় রাখা, যা ছিল তাদের রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিক স্বার্থের অনুকূলে। অন্যদিকে জিন্নাহর নেতৃত্বে মুসলিম লীগের চাহিদা ছিল ক্ষমতার হালুয়ায় ভাগ বসানো। আর এই দুই রসায়নের সম্মিলিত বিক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়েছিল পাকিস্তান নামের অভিনব রাষ্ট্রটি, যার দুটো উইংয়ের ভৌগলিক দূরুত্ব ছিল হাজার মাইলের। আর এক ধর্ম ছাড়া রাষ্ট্রটির দুই অংশের নাগরিকদের মধ্যে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না অন্য কোনো কিছুতেই।

ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান তার ব্যর্থতা প্রমাণে খুব বেশি একটা সময় নেয়নি। ‘হাতমে বিড়ি মুমে পান, লাড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’- স্লোগানে মুখরিত বাঙালিদের মোহমুক্তি ঘটতে লাগেনি এক বছরও। এই বাস্তবতায় বঙ্গবন্ধু বাঙালির জন্য একটি জাতি রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং সব শেষে একটি সুসংগঠিত মুক্তিযোদ্ধের মাধ্যমে এ দেশটিকে স্বাধীনও করেছিলেন। এমনকি বাংলাদেশের নামটিও বঙ্গবন্ধুর দেয়া। আর এর জাতির সংগীত কী হবে- তাও তিনিই ঠিক করে দিয়েছিলেন। সে কারণে তিনি বঙ্গবন্ধু- বাংলাদেশের জাতির পিতা। এ কারণেই বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একে অপরের সমার্থক। এ কারণেই বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ।

তিন

বাংলাদেশ সৃষ্টির খেসারত আর ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার হাইপোথিসিসকে অকার্যকর প্রমাণের এক্সপেরিমেন্টটি বঙ্গবন্ধুর জন্য খুব ভারি হয়ে গিয়েছিল। ইংরেজিতে যাকে বলে, ‘ভেরি কস্টলি’। নিজের জীবন দিয়ে এই সফল এক্সপেরিমেন্টের মূল্য দিতে হয়েছিল তাকে। এর পর বাংলাদেশের ইহিতাস শুধু পিছনে ছোটার। কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ির যখন আগা-পাছ-তলা সব যাওয়ার দশা, ঠিক সে সময়টাতেই বাংলাদেশে হালটা ধরেছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। আস্তাকুড়ের তলানি থেকে টেনে তোলা বাংলাদেশের তার নেতৃত্বেই আবারও সঠিক পথে ছুটে চলা। গত ১২ বছরে এ দেশের ভাবমূর্তি তিনি দেশে-বিদেশে খোল নালচে পাল্টে দিয়েছেন। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, অবকাঠামোগত উন্নতি, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, দারিদ্র বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, সোসাল সেফটি নেট, সাক্ষরতা বৃদ্ধি, ডিজিটালাইজেশন কিংবা কোভিড-১৯ অতিমারী মোকাবেলায় দক্ষতা- এসব কিছু এখন রূপকথার পর্যায়ে উপনীত। আর এই সমস্ত রূপকথার একক রূপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্ব বিখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে সঙ্গত কারণে তিনি তাই পৃথিবীর ক্ষমতাশালী নারীদের অন্যতম। আজকের বাংলাদেশ মানেই শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনাই বাংলাদেশ।

চার

বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ যখন তার সুবর্ণ জয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে উপনীত, ঠিক সেই সময়টায় বিজয়ের আরেকটি মাসে দেশের দৃষ্টিনন্দন যত অবকাঠামোর তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন পদ্মা সেতু। এই অবকাঠামোটি আর দশটি অবকাঠামো থেকে ভিন্ন। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, স্যাটেলাইট, সাবমেরিন কেবল, কর্ণফুলী টানেল কিংবা ফোরলেন হাইওয়ে কোনো কিছু এর কাছে ধোপে টেকে না। কারণ এটি ‘পদ্মা সেতু’। এই সেতু জুড়ে দিয়েছে সেই প্রমত্তা পদ্মাকে, যার একদিন ছিল না কুল, ছিল না কিনারা। পদ্মা আমাদের কাছে অজেয় বিশালত্বের প্রতীক। পদ্মা আমাদের কান্নার আর দুঃখের প্রতীক। পদ্মা বাঙালির আবহমান জনজীবনেরও প্রতীক। পদ্মা জয় করা মানে জয় করা আমাদের সব দুঃখ-কষ্টকে, বশে আনা আমাদের অপ্রাপ্তিগুলোকে আর গৌরবান্নিত করা আমাদের আবহমান বাঙালিত্বকে। পদ্মা জয় তাই নতুন বাংলাদেশের জয়যাত্রার সমার্থক। পদ্মা সেতু তাই নতুন বাংলাদেশের প্রতীক। ফ্রান্সের যেমন আইফেল টাওয়ার, পদ্মা সেতু আমাদের কাছে তাই-ই।

নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি যার হাতে, এই পদ্মা সেতুর ভিত্তির প্রস্তরটিও স্থাপন করেছিলেন সেই শেখ হাসিনাই। এর আগে আমাদের সেতুটির স্বপ্নও দেখিয়েছিলেন তিনি। আর এখন দেখিয়ে দিলেন এটিকে বাস্তবায়ন করে। ঠিক যেমনটি তিনি করেছেন আজকের বাংলাদেশের বেলাতেও। শেখ হাসিনার বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পদ্মা সেতুর নামকরণ তাই ‘শেখ হাসিনা সেতু’ ভিন্ন অন্য কিছু হতে পারে কি?

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল: চেয়ারম্যান, হেপাটোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ

এ বিভাগের আরো খবর