দেশের বোরো ধানের ভান্ডার হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণার কৃষকদের মাথায় হাত। হঠাৎ অচেনা এক দুর্যোগ ‘গরম বাতাসে’ এসে এলোমেলো করে দিয়েছে সব। পুড়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান। একই দশা গোপালগঞ্জেরও কয়েকটি উপজেলায়।
প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, গরম বাতাসে তিন জেলায় অন্তত ৪২ হাজার হেক্টর বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। এখন পর্যন্ত এর সঠিক কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না কৃষিবিজ্ঞানীরা। কৃষকদের স্বপ্ন তছনছ করে দেয়া এই দুর্যোগকে কৃষিবিদদের কেউ বলছেন ‘হিট শক’, কেউ বলছেন ‘লু হাওয়া’। আর আবহাওয়াবিদদের দাবি, বাংলাদেশে এখন যে তাপমাত্রা তাতে লু হাওয়া বয়ে যাওয়ার মতো কোনো অবস্থা নেই।
নেত্রকোণা
জেলাটিতে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন হাওরপাড়ের কৃষকরা।
চলতি বোরো মৌসুমে নেত্রকোণার ১০ উপজেলায় ১ লাখ ৮৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল। আবহাওয়া পরিস্থিতি এত দিন চমৎকার থাকলেও রোববার হানা দেয় অচেনা বিপত্তি।
সেদিন সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ কালবৈশাখির দমকা বাতাস বয়ে যায় জেলার ওপর দিয়ে। এই বাতাস শুরুর কিছু সময় পর বইছিল গরম বাতাস। এই প্রথম তখন ১০ থেকে ১৫ মিনিট নাগাদ বয়ে যাওয়া গরম বাতাসে ফুল অবস্থায় থাকা জমির পুরোটাই শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
জেলার প্রতিটি উপজেলাতেই কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। তবে মদন, খালিয়াজুরী ও কেন্দুয়া উপজেলায় বেশি ক্ষতি হয়েছে।
মদনে ৪ হাজার হেক্টর, কেন্দুয়ায় ২ হাজার ৭০০ হেক্টর ও খালিয়াজুরী উপজেলায় ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ফসল পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, প্রাথমিকভাবে ১৪ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১১৬ কোটির বেশি টাকা।
ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, তারা ঋণ করে ফসল করছেন। হাওরাঞ্চলে একটাই ফসল হয়। এখন ঋণ পরিশোধ হবে কীভাবে, আর কীভাবে সংসার চলবে, সেটি বুঝে উঠতে পারছেন না তারা।
মদন উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আব্দুর রহমান বলেন, ‘জীবনে এইরম গরম বাতাস দেখছি না। অক্করে আগুনের লুক্কার মতো গরম। ঝড় কইম্যা গেলে ঘরতে বাইর অয়া দেহি পুড়ার গন্ধ। পয়লা বুঝতে পারছি না। বেইন অক্ত (সকালে) হাওরে গেয়া দেহি, ধানের ভিতরে যে চাউল অয় হেইডা অক্করে ঝইরা পুইড়া গেছে।’
কেন্দুয়া উপজেলা রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কইলাটি গ্রামের কৃষক মজিবুর রহমান বলেন, ‘রাইতে যে হাওয়াডা অইছে এইডায় জমি পুইরা গেছেগা। আমার ২৫ কাঠা জমির ধান শেষ অইয়া গেছে।’
খালিয়াজুরী উপজেলার আদমপুর বোয়ালবাড়ি গ্রামের কৃষক বাবলু চৌধুরী এবার ৮ একর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। তার অর্ধেক জমির ফসলই নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘ভাটি অঞ্চলে একডাই ফসিল অয়। ঋণ ফিন কইরা বোরো করছিলাম। সব গেছেগা। অহন আমরা কী খাইয়া বাঁচব।’
মোহনগঞ্জ উপজেলার বানিহারি গ্রামের কৃষক আইন উদ্দিন বলেন, ‘কী কষ্ট কইরা রেনাদেনা কইরা একডাই ফসিল করলাম। সব নষ্ট অইয়া গেছে। কিবায় চলাম?’
কিশোরগঞ্জ
গরম বাতাসের প্রভাবে গত রোববার কিশোরগঞ্জে হাজার হাজার একর জমির বোরো ধান পুড়ে গেছে।
জেলার ১৩টি উপজেলার হাওরে মাত্র ১০ মিনিটের গরম বাতাসে প্রায় ২৬ হাজার হেক্টর জমির ধান পুড়ে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ২০০ কোটি টাকার মতো।
জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, বোরো ধানের জমি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে ৩ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমির। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২২ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমির ধান।
কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার রায়টুটী ইউনিয়নের কৃষক পালন মিয়া। এই চাষি ধান আবাদ করেছিলেন ছয় একর জমিতে। আশা করছিলেন ধান পাবেন কমছে কম চার শ মণ। কিন্তু সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। মাত্র ১০ মিনিটের গরম বাতাসে নষ্ট হয়েছে কৃষক পালন মিয়ার জমির ফসল।
রায়টুটী এলাকার তলার হাওরে ১২ একর জমি আবাদ করেছিলেন কৃষক আ. হেকিম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বছর ধানের দাম বেশি ফাইছি, হের লাইগ্যা এইবার আরও বেশি কইরে জমি করছি। জমির মইধ্যে ফসলও অইছিন বালা। কিন্তু গত রাইতেই ১০ মিনিডের একটা গরম বাতাসে সব পুইড়ে ছারকার কইরে দিসে। আমার সত্তর বছর বয়সে এই যাইত্তে বাতাস আমি জীবনেও দেখছি না। সহালে ঘুমেত্তে উইট্টে জমিতে গিয়া দেহি সব শেষ।
কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি কৃষি বিভাগকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। তালিকা হাতে পেলে সহায়তা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে লিখিত পাঠানো হবে।’
গোপালগঞ্জ
গরম বাতাসে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে গোপালগঞ্জের বোরোচাষিরাও। জেলা কৃষি বিভাগ ক্ষতির পরিমাণ এখনও সুনির্দিষ্ট করতে না পারলেও তাদের ধারণা অন্তত হাজার- বারো শ হেক্টর জমির ধান পুড়ে গেছে।
জেলার কৃষি বিভাগ বলছে, অন্তত ১০টি ইউনিয়নে এই হাওয়ার প্রভাব দেখা গেছে। হঠাৎ করে এ ধরনের ঘটনায় একদিকে যেমন কৃষকেরা হতবাক অন্যদিকে, এর জুতসই কারণ খুঁজে পাচ্ছে না কৃষি বিভাগ।
এর আগে এ ধরনের ঘটনা কোথাও ঘটেছে কি না কারও জানা নেই। যে কারণে গোপালগঞ্জ কৃষি অফিস থেকে বিষয়টির ব্যাপারে তদন্ত করার জন্য ফরিদপুরের ভাঙ্গায় অবস্থিত ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের আহ্বান জানিয়েছে।
গত রোববার রাতে ৩০ মিনিটের মতো জেলার বিভিন্ন এলাকায় গরম বাতাস বয়ে যায়। আর এতে ক্ষেতে উঠতি বোরো ধান যেগুলেতে কেবল ধানের শিষ (দুধ) এসেছে সেই ধান সব চিটায় পরিণত হয়ে সাদা বর্ণ ধারণ করে। আর এতে জেলার শত শত কৃষক কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মধ্যে রয়েছে কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি, পিঞ্জুরী, হিরণ ও আমতলী ইউনিয়ন, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর, ডুমুরিয়া, পাটগাতি ও বর্নি ইউনিয়ন, কাশিয়ানীর রাতইল ইউনিয়ন, সদর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের শ শ হেক্টর জমির বোরো ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
কৃষকেরা আগামী বছর কী খেয়ে বাচঁবে তা নিয়ে তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। রোববার বিকেলেও কৃষকেরা তাদের ধান ক্ষেতে সবুজ দেখে আসলেও সকালে জমির আলে গিয়ে দেখেন সব ধান সাদা হয়ে গেছে। কিছুই বুঝে উঠতে পারেননি। কীভাবে কী হলো।
জেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, এ বছর গোপালগঞ্জ জেলায় ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে।
যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এর এক দল বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানী নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন জমি পরিদর্শন করেন। এই দলে ছিলেন ইনস্টিটিউটের ড. মো. নজরুল বারী, মোহাম্মদ আসিক ইকবাল খান, ড. মো. সাজ্জাদুর রহমান।
কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম শাহজাহান কবীর জানান, বিজ্ঞানী দলের সদস্যরা মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করেছেন। তারা উপজেলার তাম্বুলিপাড়া, গোগ এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে যান। সেখানে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। পরে ধানের ফুল ও দুধ অবস্থায় তাপ প্রবাহের দরুণ ‘হিট শক’ হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন দলের সদস্যরা ।
তিনি আরও জানান, এ অবস্থায় করণীয় সম্পর্কে বারির পরিদর্শন টিমের সদস্যরা দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তাদের পরামর্শ, যেসব ধান এখনও শীষ বের হয়নি অর্থাৎ বুটিং ও হেডিং স্টেজ এ আছে, সেগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে। তাই এই স্টেজে থাকা ধানের ক্ষেতগুলোতে পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখা এবং ম্যাজিক স্প্রে (১০ লিটার পানিতে ৬০ গ্রাম এমওপি সার, ৬০ গ্রাম থিওভিট ও ২০ গ্রাম চিলেটেড জিংক) জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। এতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় থাকা ধানগাছগুলো কিছুটা শক কাটিয়ে উঠতে পারবে।
কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ছাইফুল আলম বলেন, ‘বৃষ্টিবিহীন ঝড়ো বাতাসে এই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাওরের ধানের গাছগুলো এখন মিল্কিং স্টেজে (দুধ অবস্থায়) আছে। এই সময়ে প্রায় ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার গরম বাতাসে ধান পুড়ে চিটা হয়ে গেছে।’
গরম বাতাস তথা ‘লু হাওয়ার’ কারণেই এসব ধান নষ্ট হয়েছে বলে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিদের বরাতে জানিয়েছেন গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায়।
তিনি বলেন, ‘জেলার টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া এবং কাশিয়ানীতে এক রাতের মধ্যে শত শত হেক্টর জমির ধান সবুজ থেকে সাদা হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে ধানের শিষ (দুধ অবস্থায়)। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন লু হাওয়া বা গরম বাতাসের কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।’
মঙ্গলবার ধান গবেষণা ইনিস্টিটিউটের ভাঙ্গা (ব্রি) এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. একলাচুর রহমান, বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মনোজিৎ কুমার মল্লিক, গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. অরবিন্দ কুমার রায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।
তারা জানান, গরম বাতাসের কারণে যেসব ধান কেবল দুধ অবস্থায় বা ফ্লাওয়ারিং অবস্থায় রয়েছে সেসব ধানই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা কৃষকদের ধান গাছে পানি দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাতে যেসব ধান ফ্লাওয়ারিং অবস্থায় রয়েছে সেগুলো বাঁচানো সম্ভব হতে পারে।
সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর পাশাপাশি যুদ্ধকে ‘না’ বলতে বৃহস্পতিবার সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
থাইল্যান্ডে জাতিসংঘের কনফারেন্স সেন্টারে (ইউএনসিসি) এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান বলে বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলতে হবে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘শান্তির জন্য নতুন এজেন্ডা’র পক্ষে।”
ভাষণে সব ধরনের যুদ্ধ, আগ্রাসন ও নৃশংসতা বন্ধে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুধু হতাহতের সংখ্যা বাড়াচ্ছে, বিশেষত নারী ও শিশুরা এর বলি হচ্ছে। অথচ আলোচনায় আসতে পারে শান্তি।
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি যুদ্ধ ও গণহত্যা চলছে। এটি অবশ্যই বন্ধ হতে হবে। যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না।’
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা তার উদ্যোগ ও শাসনামলে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’র কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আঞ্চলিক বিরোধ ও উত্তেজনা নিষ্পত্তি করতে হবে।’
আরও পড়ুন:তীব্র তাপপ্রবাহে পানির জন্য হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহীতে। পানির অভাবে ব্লাস্টসহ বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের শিকার হচ্ছে বোরো ধান। ধানের পাশাপাশি ক্ষতির মুখে পড়েছে অন্যান্য ফসলও। পানির সংকট হওয়ায় আমের মুকুল ঝরে যাচ্ছে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ধান চাষি আজমত উল্লাহ জানান, পানির অভাবে ধানের জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। ধানে পোকাড় আক্রমণ হচ্ছে। ধানের থোড়া আসায় পানির দরকার হলেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েকদিন বরেন্দ্রের গভীর নলকূপে সেচের জন্য ঘুরছেন। তবে সিরিয়াল পাচ্ছেন না।
জেলার কয়েকটি আম বাগান ঘুরে দেখা যায়, প্রচুর পরিমাণ আম ঝড়ে পড়ছে। গাছের নিচে ঝড়া আম স্তুপ হয়ে আছে।
চারঘাট উপজেলার আমচাষী জব্বর আলী বলেন, পানির অভাবে আম ঝড়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই আম ঝড়ে যাচ্ছে। পানি দিয়েও আম ঝড়া ঠেকানো যাচ্ছে না। পানিও ঠিক মত উঠছে না। এবার আমের ফলন ঠিক মত হবে না।
অন্যান্য চাষীরাও বলছেন একই কথা। পানি না থাকায় বালায় নাশক স্প্রেও দেয়া যাচ্ছে না। ফলে পোকামাকড় আক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বরেন্দ্রের অপরিকল্পিত সেচ প্রকল্পের কারণে এই অঞ্চলে পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে। ফলে পানির সংকট সৃষ্টি হয়ে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পানির অভাবে বোরো ধানের উৎপাদন প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচার এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসান বলেন, বোরো ধানের জমিতে কম পক্ষে ৩ সেন্টিমিটার পানি থাকা প্রয়োজন। তা না হলে ধানের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। ধানের থোড়া তে প্রচুর পরিমাণ চিটা দেখা দেয়। আর পানির অভাবে বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগ হয়ে ধান গাছ হলুদ হয়ে যায়। যেভাবেই হোক বোরো ধানের জমিতে সব সময় পানির ধরে রাখতে হবে। এবার যেভাবে তাপ প্রবাহ ও পানির সংকট তৈরি হয়েছে এটা আরো কিছুদিন অব্যাহত থাকলে বোরোর উতপাদন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, তাপ প্রবাহের ফলে আমের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পানির সংকট তৈরি হওয়ায় আম ঝড়ে পড়ছে। আমের ঝড়ে পড়া রোধে আম গাছের গোড়াতে সপ্তাহে অন্তত একদিন পানি দিতে হবে হবে। কৃষকদের আমরা গাছের গোড়াতে পানি দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। এ বছর রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ২ লাখ ৬০ হাজার ১৬৪ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হলেও তা অর্জন করা সম্ভব হবে না।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শীতাংশু কুমার পাল বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে প্রতি বছর পানির তীব্র সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অপরিকল্পিত গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ প্রকল্পের কারণে পানির স্তর আরো বেশি দ্রুত নিচে নেমেছে। গভীর নলকূপেও এখন ঠিম মত অয়ানি উঠছে না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ পেতে হবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন কমিয়ে নদী থেকে জমিতে সেচ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি জমানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
তবে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রশিদের দাবি, সমালোচকরা পানি সংকটের বিষয়ে বরেন্দ্রের ঘাড়ে এককভাবে দোষ চাপাচ্ছে। পানির সংকট মোকাবিলায় নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষি জমিতে সেচ দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পদ্মা নদী থেকে আশেপাশের অঞ্চলে সেচের পানি সরবারাহ করতে ইতিমধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নষ্ট হয়ে যাওয়া গভীর নলকূপ গুলোও মেরামত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, তীব্র তাপ প্রবাহের ফলে কিছুটা পানি সংকট তৈরি হলেও তা দ্রুত সমাধান করতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছে। বোরো ধানের জমিতে পানি পানি সরবারাহের বিষয়ে বরেন্দ্র অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সাবিনা বেগম জানান, বোরো ধানের জমিতে পানি সরবাহর নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর একযোগে কাজ করার ব্যাপারে সমন্বয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে কথা বলা হচ্ছে যেন সেচের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারাহ নিশ্চিত করা যায়।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে সম্পত্তির লোভে মারধর করে আপন ভাতিজিকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের কুমুদপুর গ্রামে বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নারীসহ তিনজনকে আট করেছে পলাশবাড়ী থানা পুলিশ।
প্রাণ হারানো তরুণীর নাম শারমিন আক্তার (২২), যিনি প্রয়াত শুক্কুর উদ্দিনের মেয়ে। বিয়ে বিচ্ছেদের পর শারমিন বাবার বাড়িতেই থাকতেন।
শারমিনের অভিযুক্ত চাচার নাম আবদুল খালেক।
তরুণীর পরিবার, স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানায়, প্রায় এক বছর আগে পিতৃহারা শারমিনকে কৌশলে বিয়ে দেন তার চাচারা। বিয়ের পর তালাক হলে সমঝোতায় দেনমোহরের টাকা শারমিনকে না দিয়ে আত্মসাৎ করেন তার বড় চাচা আবদুল খালেক। সেই টাকা ও শারমিনের নামে থাকা জমি নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল।
তারা আরও জানান, সম্পত্তি নিয়ে বুধবার বেলা ১১টার দিকে শারমিনের সঙ্গে তার চাচাদের বিরোধ বাধে। ওই সময় অভিযুক্তদের মারধরে গুরুতর আহত হন শারমিন। পরে আহত শারমিনকে অভিযুক্তরাই উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধার জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
শারমিনের দুলাভাই রুহুল আমিন বলেন, ‘শারমিন ও শাম্মী আপন দুই বোন। আমার শ্বশুর (শারমিনের বাবা) মারা গেছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর শারমিন আমার বাড়িতেই থাকত। পরে শারমিনের বাবলু নামের এক ফুফা ও তার জ্যাঠারা মিলে কৌশলে শারমিনকে আমার বাড়ি থেকে নিয়ে এসে বিয়ে দেন।
‘বিয়ের তিন-চার মাস পরই তালাক হয় শারমিনের। তখন থেকেই শারমিন আমার শাশুড়ির সাথে তার বাবার বাড়িতেই থাকত।’
শারমিনের মা এবং এ তরুণীর দুলাভাই রুহুল আমিনের অভিযোগ, শাম্মী ও শারমিনের নামে ৩২ শতাংশ জমি আছে। সেই জমি নেয়ার লোভে ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন সময়ে ঝগড়া-বিবাদ, গালিগালাজসহ শারমিনকে মারধর করতেন তার চাচা আবদুল খালেক। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার শারমিনের কাছে জমি চেয়ে মারধর শুরু করেন তিনি। পরে আবদুল খালেকের ভাই আবদুল বারী, ভাতিজা রহমান ও ছকু নামের একজন মারধর করতে থাকেন। ওই সময় তাদের মারধরে শারমিন ঘটনাস্থলেই মারা যান।
মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পলাশবাড়ী থানার ওসি কেএম আজমিরুজ্জামান বলেন, ‘মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় নারীসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
‘নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মামলা হলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ওই সময় এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘প্রাথমিক সুরতহালে নিহতের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া গলাতে কোনো দাগ চোখে পড়েনি, তবে শ্বাসরোধের বিষয়টি ক্লিনিক্যালি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।’
আরও পড়ুন:দেশজুড়ে চলমান দাবদাহ আরও ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বৃহস্পতিবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন।
সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর চলমান তাপপ্রবাহ আজ (২৫ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ নিয়ে জানায়, খুলনা বিভাগসহ দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগ এবং রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৮৮ জন সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিটিএ জেটি ঘাট থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের টাগবোটে তুলে দেয়া হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, গভীর সাগরে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে অপেক্ষায় থাকা মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ চিন ডুইনে তাদের তুলে দেয়া হবে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওই জাহাজ বুধবারই বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছায়। ওই জাহাজে করেই ১৭৩ জন বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন। যারা বিভিন্নভাবে মিয়ানমারে আটকা পড়েছিলেন বা সাজা পেয়ে জেলখানায় ছিলেন।
মিয়ানমার নৌবাহিনীর ওই জাহাজে করে দেশটির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও বুধবার দুপুরে কক্সবাজার পৌঁছায়। পরে তারা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নে বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর তারা মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের যাচাই-বাছাইসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
বিজিবি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ১১টি বাসে করে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাটে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে আনার পর ইমিগ্রেশন ও ডকুমেন্টেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে শুরু হয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও কোস্ট গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতসহ দেশটির প্রতিনিধি দলের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন।
এরপর সকাল ৭টার দিকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কর্ণফুলি টাগবোটে তুলে দেয়া হয়। কোস্ট গার্ডের একটি ট্রলার টাগবোটটিকে পাহারা দিয়ে গভীর সাগরে নিয়ে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাতেও। সীমান্তের ওপারের মর্টার শেল ও গুলি এসে এপারে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
ওই সংঘাতের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জনকে প্রথম দফায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেরত পাঠিয়েছিল সরকার।
তাদের মধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি ৩০২ জন, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দুজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
এরপর বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্ত নিয়ে কয়েক দফায় আরো ২৮৮ জন সীমান্তরক্ষী ও সেনা সদস্য এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এবার তাদের ফেরত পাঠানো হলো।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন সাজেকে শ্রমিকবাহী ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
বাঘাইছড়ি থানার সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আওয়াল বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তিনজনকে মৃত বলে জানান।
এর আগে বিকেলে সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য, খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদয়পুর সীমান্তবর্তী সড়ক নির্মাণের জন্য ডাম্প ট্রাকে ১৪ জন শ্রমিক জামান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সেতুর কাজে যাচ্ছিলেন। পথে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ঢালে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয়জনের মৃত্যু হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি খুবই দুর্গম এলাকা। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কারও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ২৮৮ জন বিজিপি ও সেনা সদস্যকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ভোর রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে কক্সবজার ইনানী নৌবাহিনী জেটি ঘাটে নেয়া হয় তাদের। সেখানে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে তাদেরকে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
গত ১১ মার্চ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির জামছড়ি ও আশারতলী সীমান্তে দিয়ে প্রথম দফায় ১৭৯ জন মিয়ানমারের বিজিপির সদস্য আশ্রয় নেন। পরে কয়েক দফায় ঘুমধুম, তুমর্রু ও কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে দিয়ে মোট ২৮৮ জন মিয়ারমারের সেনা ও বিজিপির সদস্য আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিজিপি ও সেনা সদস্যদেরকে নাইক্ষ্যংছড়ি বর্ডার গার্ড সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়েছিল। তাদের সে দেশের নৌবাহিনীর জাহাজে করে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি কর্মকর্তারা।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জন। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার উখিয়ার ইনানী নৌ-বাহিনীর জেটিঘাট দিয়ে তাদের মিয়ানমারে পাঠানো হয়েছিল।
মন্তব্য